চবি উপাচার্য নিয়োগ: দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে কারা?

নানা ধরনের অনিয়ম, একনায়কতন্ত্র, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি-সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তোষণ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচর্যের পদটিকেই বিতর্কিত করে তোলা হয়েছে। তাছাড়া উপাচার্য নিয়োগে এখন তদবির এবং তোষামোদই বড় যোগ্যতা হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের। এর মধ্যে নতুন উপাচার্য হতে ‘দৌড়ঝাঁপ’ শুরু করেছেন কয়েকজন শিক্ষক। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নজরে আসতে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপাচার্য হতে আগ্রহীদের দৌড়ে রয়েছে— বর্তমান উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. সুলতান আহমদ, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরী। এছাড়া বর্তমান উপাচার্যেরও দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্বপালনের আগ্রহ রয়েছে। আগামী ১৫ জুন বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।

নতুন উপাচার্য নিয়োগের দৌড়ঝাঁপে বেশ শোনা যাচ্ছে বর্তমান উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীন আখতারের নাম। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষাজীবনের চারটি স্তরেই তার দ্বিতীয় শ্রেণি। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। উপাচার্য হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে ছুটছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত তিন বছর উপ-উপাচার্য পদে দায়িত্বপালনের আগে বড় কোনো দায়িত্ব পালন করেননি।

দ্বিতীয় বিভাগ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন প্রফেসর সুলতান আহমেদ। পিএইচডি করেছেন ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় হতে। সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফের ঘনিষ্ঠ প্রফেসর সুলতান বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল উপাচার্যের সময়েই প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে পরিচিত। তার কথায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিতে হতো উপাচার্যদের। বিগত তিন উপাচার্যের সময়ে তার আপন ভাইসহ অনন্ত ১২ জন নিকটাত্মীয় ও তার গ্রামের লোকের চাকরি দিয়েছেন তিনি। তার সুপারিশ ছাড়া বিবিএ অনুষদের শিক্ষক নিয়োগ হয় না বলেও প্রচার রয়েছে।

সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রফেসর ড. সেকান্দর চৌধুরীও দৌড়ঝাঁপে এগিয়ে আছে। শিক্ষাজীবনে তার তিনটি দ্বিতীয় শ্রেণি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়েছেন পিএইচডি ডিগ্রি। বিগত বিভিন্ন উপাচার্যের সময়ে তিনি নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে তিনি উপাচার্য কিংবা উপ-উপাচার্য যে কোনো একটি পদে নিয়োগ পেতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নজরে আসার চেষ্টা করছেন।

বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি নির্বিচারে ছাত্রলীগ নিয়োগ দিয়েছেন। গত চার বছরে প্রায় ৭০ জন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদধারী নেতাকর্মীদের তিনি শিক্ষক ও কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় মামলা। নির্ধারিত যোগ্যতার ন্যূনতম পূরণ করে আবেদন করেই তার আমলে শিক্ষক হয়ে গেছেন ছাত্রলীগের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী। চবি ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে এডহক ও সার্কুলারের মাধ্যমে তিনি চাকরি দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ১৯৮৯ সালের পর থেকে দীর্ঘ ৩০ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্ষদ সিনেটে উপাচার্য প্যানেলে কোনো নির্বাচন হয়নি। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেট সদস্যরা উপাচার্য প্যানেলের জন্য ৩ জনকে নির্বাচিত করে তাদের মধ্য থেকে উপাচার্য পদে ৪ বছরের জন্য নিয়োগের জন্য আচার্য অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন। কিন্তু প্রায় ৩ দশক ধরে অনির্বাচিত শিক্ষকরাই উপাচার্যের পদে থেকেছেন। নেই কোনো রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন, নেই ছাত্রদের কোনো প্রতিনিধিত্ব। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যই সর্বেসর্বা অর্থাৎ তিনিই যেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।


সর্বশেষ সংবাদ