কুবিতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ

স্ক্রিনশট
স্ক্রিনশট

সম্প্রতি ইসলাম ও মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের জয় দেব নামের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করে আদালত। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট ব্যবহার করে আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের অভিযোগ এনে তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সম্পীতি নষ্ট করতে একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোধিতভাবে এমন উস্কানিমূলক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। এদিকে নিজের নিরাপত্তা চেয়ে সোমবার বিকেলে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করছেন বলে জানান ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গত রবিবার (১৯ মে) ইসলাম ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় জয়দেব চন্দ্র শীল নামে এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এরপর রাতেই ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোতে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে দেখা যায় মঈনুল ইসলাম আবির নামে একটি আইডি থেকে হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে কোন একটি পোস্টে মন্তব্য করা হয়েছে। পরে এটির স্ক্রিনশট চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম আবির এমনটি করেননি বলে জানিয়ে ওই গ্রুপে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এ ঘটনার পরপরই অজ্ঞাতনামা ৩০-৪০ ব্যক্তি কুমিল্লা নগরীর পশ্চিম বাঁগিচাগাও এলাকায় মইনুল ইসলাম আবিরের মেসে তাকে খুঁজতে যায়। কিন্তু তারা আবিরকে সেখানে খুঁজে পাননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোতায়ালী মডেল থানায় জানালে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গেলে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শ্যামল চন্দ্র দাস নামের একটি ভুয়া ফেসবুক একাউন্ট থেকে মঈনুল ইসলাম আবির নামের অন্য একটি একাউন্ট ব্যবহার করে ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যটি নিজের ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মঈনুলের নামে চালিয়ে দেন। কিন্তু শ্যামলের একাউন্ট ঘুরে দেখা যায় তার মেইল একাউন্টটি moynulislam.abir.35 নামে। যা দেখে শিক্ষার্থীরা বুঝে যে শ্যামল চন্দ্র দাস নামক আইডি থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে সাম্প্রদায়িক গুজব ছড়ানো হচ্ছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মঈনুল বলেন, ‘এটা পুরোটাই একটা সাজানো নাটক ছিল। তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে মারতে পর্যন্ত গিয়েছে তবে আমি সেখানে ছিলাম না বলে বেচে যাই। আর যারা আমারা বিরুদ্ধে এমন মিথ্যাচার করেছে এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য নষ্ট করার চেষ্টা করেছে আমি তাদের সর্বোচ্চ বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালাম মিয়া জানান, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন। আর এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।

সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কাল রাত থেকে বিষয়টির সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আর পুলিশ প্রশাসনের সাহায্যে ওই আইডিগুলো শনাক্ত করে অপরাধীদের বিচারে আওতায় আনার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, শনিবার (১৮ মে) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের (২০১৪-১৫ সেশন) শিক্ষার্থী জয়দেব চন্দ্র শীল ‘Voice of America’ নামে একটি ফেসবুক পেজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি ভিডিওতে ‘All muslims in the world believe only on terrorism ideology that had been exercised bz Hazrat Muhammed (s).’ মন্তব্য করেন। এ মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নজরে আসলে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়েছে। রোববার বিকেলে কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং অভিযুক্ত জয়দেবকে আটক করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ