চাকরি হারানো কর্মহীনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে, নতুন পেশার সন্ধানে মানুষ

  © ফাইল ফটো

রাজধানীর একটি বেসরকারি পার্কে কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতেন এমবিএ পাস কাদের চৌধুরী (ছদ্মনাম)। কিন্তু করোনার কারণে পার্কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার বেতন আটকে যায়। চার মাস ঘরে বসে থেকে নতুন করে অনলাইনে ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, সংসারে স্ত্রী গর্ভবতী, এমন সময়ে চাকরি অনিশ্চিত। সংসার চালানো, স্ত্রীর চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সেজন্য নতুন পেশা হিসেবে অনলাইনে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন তিনি।

করোনা সংকট পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য কাদের চৌধুরীর মতো অসংখ্য বেসরকারি কর্মজীবী চাকরি হারিয়েছেন বা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে টিকে থাকতে নতুন পেশা খুঁজতে শুরু করছেন। সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করছেন। তবে এটি সাময়িক, স্থায়ী নয়। সংক্রমণ কমে গেলে তারা আগের জায়গায় ফিরে আসবেন। এটি দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার হিসেব মতে, দেশে কর্মে নিয়োজিত ছিলেন প্রায় ছয় কোটি ৮২ লাখ মানুষ। কিন্তু করোনার কারণে অন্তত তিন কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। সরকার ঘোষিত লকডাউনের ৬৬ দিনে এসব মানুষ কাজ হারান। তবে সরকারি হিসাবে কর্মহীন লোকের সংখ্যা ১৪ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও সর্বশেষ রিপোর্টে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় প্রবাহে বিশ্বে ৩৪ কোটি মানুষ কাজ হারাবেন। তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নামও।

একটি গণমাধ্যমে চাকরি করতেন রাফি বিশ্বাস (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, করোনার কারণে সাধারণ ছুটি শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেটি ফের চালু হলেও তাকে আর কাজে ফিরতে দেওয়া হয়নি। তার মতো আরও অনেককে বাদ দিয়ে অর্ধেক জনবল দিয়ে গণমাধ্যমটি চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, করোনায় বেশি ক্ষতি হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। অসংখ্য ছোট ব্যবসায়ী হারিয়েছেন মূলধন। আর প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেসরকারি লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। ফেনীর দাগনভুঞা হাসাননগর গনিপুর গ্রামের জনি। পাঁচ মাস আগেও রাজধানীর মহাখালীর রসুলবাগ মোটরপার্টসের দোকানে ১২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন। করোনায় বেতন বন্ধ হলে পেশা পরিবর্তন করে কৃষিতে প্রবেশ করেছেন তিনি।

জনি বলেন, মা-বোনকে নিয়ে মোহাম্মদপুরে ভাড়া থাকতেন। বেতনের ওপর নির্ভর করে সংসার চলত। কিন্তু করোনায় তার কর্মক্ষেত্র তিন মাস ধরে বন্ধ। বেতন-ভাতাও নেই। ফলে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। তিনি এখন পেশা পরিবর্তন করে কৃষি কাজ করছেন। পটুয়াখালীর রুহুল আমিন বলেন, এখন টিকে থাকাই বড় লড়াই। আর এ লড়াইয়ের জন্যই নতুন পেশা শুরু করছি। ভালো আয় নেই, কোনোমতো দিন কাটাচ্ছি।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সেবাজনিত পেশায় বেশি মন্দা চলছে। ছোটখাটো দোকানে কম বেচা-কেনা হচ্ছে। ঢাকামুখী অনেক মানুষ সহায়-সম্বল বিক্রি করেই জীবিকার সন্ধানে এসেছিলেন।

জানা গেছে, রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, আজিমপুর, কাটাসুরসহ অনেক এলাকার দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। টাঙানো আছে দোকান ভাড়া দেওয়া হবে লেখা বিজ্ঞাপন। করোনার মধ্যে লোকসানে পড়ে দোকানি ব্যবসা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। নিউমার্কেট, গাউছিয়াসহ অনেক বড় মার্কেটেওভাড়ার সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে।

এদিকে চলতি বাজেটে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে সাধারণ ছুটি, কলকারখানা বন্ধ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির থাকায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) তথ্য অনুযায়ী, কর্মহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। আরও বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার এক লাখ তিন হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ