মাটি বিক্রির টাকায় চলে জহিরের সংসার

  © টিডিসি ফটো

জহিরুল ইসলাম। নার্সারির চারা রোপনের জন্য ব্যাগে করে মাটি বিক্রি করেন তিনি। এই টাকাতেই চলে তার পুরো সংসার। মাটির মানুষ জহির, মাটি বিক্রিই তার পেশা।

জহিরুল থাকেন রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায়। স্ত্রী আর দুই মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার জহিরুলের। পলি মিশ্রিত উর্বর মাটি কিনে এনে তা খুচরা বিক্রি করেন তিনি। প্রতিদিন যা রোজগার হয় তা দিয়েই চলে তার সংসার। দৈনিক তিন থেকে চার শ’ টাকা রোজগার করেন তিনি। মাটি বিক্রির এই টাকাতেই কোনোমতে চলে যায় জহিরুলের সংসারের খরচ।

মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে একটু পশ্চিমে রাস্তার উত্তর পাশে ফুটপাতে দেখা গেল জহিরুল ছোট ছোট প্যাকেটে করে মাটি বিক্রি করছেন। এই মাটির প্রধান খরিদদার নার্সারির মালিক ও সৌখিন বৃক্ষপ্রেমীরা। প্রায় ১৮ বছর ধরেই মাটি বিক্রি করেই চলছে তার সংসার।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে নানা প্রজাতির গাছের চারা বিক্রি হয়। এসব অস্থায়ী নার্সারিতেও জহিরুল নিয়মিত মাটি বিক্রি করেন। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন স্থায়ী নার্সারিতেও অনেক সময় জহিরুল চুক্তিতে মাটি সরবরাহ করেন।

তবে এর মধ্যেও কিছুটা অপূর্ণতার কথা জানালেন জহিরুল। জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু মাটি বিক্রি করে এখন আর সংসার চলতে চায় না। আগে দু’জনের সংসার ছিল। এখন ঘরে তার দু’টি কন্যা সন্তান। এরা দুজনেই এখন স্কুলে যায়।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ব্যবসার ক্ষেত্র বাড়াচ্ছেন জানিয়ে জহিরুল জানান, আগারগাঁওয়ের একটি স্কুলে বড় মেয়ে পড়ে ক্লাস ওয়ানে আর ছোট মেয়ে পড়ে শিশু শ্রেণিতে। আগের তুলনায় খরচও বেড়েছে অনেক। তাই মাটি বিক্রির পাশাপাশি কয়েক বছর আগে জহিরুল আগারগাঁয়ের গ্লোবাল স্কুলের পাশে নিজেই গড়ে তুলেছেন একটি নার্সারি। মাটি বিক্রির পাশাপাশি এখানে তিনি মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারাও বিক্রি করেন। ফলে আয় ইনকামও কিছুটা বেড়েছে।

জহিরুল আরো জানান, সপ্তাতে দু’দিন তিনি আমিনবাজার থেকে ট্রাক হিসেবে পাইকারি দামে মাটি কিনে আনেন। পরে ওই মাটিতে গোবর ও অন্যান্য কিছু জৈবসার মিশিয়ে গাছ লাগানোর উপযোগী করে তোলেন। পরে ওই মাটি বিভিন্ন আকারের প্যাকেটে বা বস্তায় করে নগরীর বিভিন্ন অস্থায়ী ফুটপাতের নার্সারিতে বিক্রি করেন।

এই মাটি কোথা থেকে সংগৃহিত হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রধানত নিচু এলাকার ফসলি জমি থেকেই পলি মিশ্রিত এই দো’আশ মাটি পাইকারেরা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন আমিনবাজারে। সেখান থেকেই তার মতো অনেকেই মাটি কিনে এনে খুচরা বিক্রি করেন।

মাটির দাম নির্ধারিত হয় বিভিন্ন সাইজের প্যাকেটের ওপর নির্ভর করে। প্যাকেটের সাইজও নানা ধরনের। একেবারে ছোট প্যাকেট হলে তার সাইজ ধরা হয় ৬। এভাবে একটু বড় হলে ৮, ১০, ১২, ১৫। বড় প্যাকেট হলে তাকে বলা হয় বস্তা। ৫০ কেজি ওজনের সিমেন্টের একটি বস্তায় ভরা মাটি খুচরা বিক্রি হয় এক শ’ টাকায়। ছোট প্যাকেটের মাটির মূল্য ১০ টাকা শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত।

মাটি বিক্রির বড় একটি বাজার ছিল হাইকোর্টের দক্ষিণ গেট ও দোয়েল চত্বর এলাকার রাস্তার দুপাশের নার্সারিগুলোতে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে মেট্টো রেলের কাজের জন্য অনেক নার্সারি তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে ইদানিংকালে জহিরুলের মাটি বিক্রির বাজারও সংকুচিত হয়েছে। তবে আগারগাঁও, মিরপুর-১০, বনানী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কিছু বড় বড় নার্সারিতে মাটি বিক্রির বড় বাজার রয়েছে বলেও জানান তিনি।

জহিরুলের কাছে মাটি কিনতে আসা ফাহিমা আক্তার নামের এক গৃহিনী জানান, শখ করে বাসার ছাদে টবের মধ্যে তিনি বেশ কিছু গাছের চারা লাগিয়েছেন। কিন্তু চারাগুলো লালচে হয়ে যাচ্ছে, বড়ও হচ্ছে না। তাই টবের মাটি পরিবর্তন করে নতুন মাটি ব্যবহার করতে চান তিনি। নতুন মাটিতে গোবর আর জৈবসার মিশ্রিত করে ব্যবহার করা হলে নতুন করে চারাগুলো প্রাণ ফিরে পাবে বলে তার ধারণা।

এক বস্তা মাটি তিনি জহিরুলের কাছ থেকে এক শ’ টাকায় কিনে নিলেন। এভাবেই এর ওর কাছে মাটি বিক্রি করে চলে যায় জহিরের দিন। কেটে যাচ্ছে জীবন ঠিক জীবনের নিয়মেই।


সর্বশেষ সংবাদ