জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান?

জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার লক্ষ্য অনেকেরই। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসে প্রবেশের পদ অর্থাৎ সহকারী জজ/জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সম্প্রতি ১০০টি পদের জন্য ১৩তম বিজেএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। বাছাইপদ্ধতি, পরীক্ষা প্রস্তুতি ও আবেদনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন

বাছাই পরীক্ষা পদ্ধতি
সহকারী জজ/জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগের জন্য ৩টি ধাপে প্রার্থীকে উত্তীর্ণ হতে হবে—প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা।

প্রিলিমিনারি
সব প্রার্থীকে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে হবে। প্রতিটি এমসিকিউ প্রশ্নের মান ১। আর প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা হবে। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকবে আইন, বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়), কম্পিউটার ও দৈনন্দিন বিজ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যাঁরা ৫০% নম্বর পাবেন, তাঁরা সবাই লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার নম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যোগ করা হবে না। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির বিষয়ে খুলনার সহকারী জজ ফারুক আজম বলেন, ‘প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য শুরুতে বাজার থেকে বিগত সালের প্রশ্নের ব্যাখ্যা আছে এমন একটি বই কিনে বুঝে বুঝে পড়ে ফেলতে হবে। আর বোঝার চেষ্টা করতে হবে, কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে আর কোন কোন টপিক থেকে প্রতিবছরই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। প্রিলিমিনারিতে আইন বিষয় থেকে ৬০ থেকে ৬৫টি প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। আর বাকি বিষয়গুলো থেকে ৩৫ থেকে ৪০টা প্রশ্ন করা হয়। অনার্সে পঠিত সব ধরনের আইনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন হতে পারে। বাংলাদেশের সংবিধানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশের সংবিধান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। পাশাপাশি দেওয়ানি আইন, দণ্ডবিধি, ফৌজদারি আইন ও পারিবারিক আইন, সাক্ষ্য আইনের প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। একজন আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে আইনের খুঁটিনাটি সব বিষয় সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। এ ছাড়া গণিতে ভালো করতে হলে গণিতের বেসিক শক্তিশালী করতে হবে। বাজারের প্রচলিত বইয়ের পাশাপাশি সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বইগুলো অনুশীলন করা যেতে পারে। সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ভালো করার জন্য নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ার বিকল্প নেই। বিবিসি ও সিএনএনের খবরও শোনা যেতে পারে। ইংরেজিতে ভালো করার জন্য প্রচলিত গাইড বইয়ের পাশাপাশি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা পড়তে পারলে লিখিত পরীক্ষায়ও কাজে দেবে। বাংলায় প্রস্তুতির জন্য নবম-দশম শ্রেণির মুনীর চৌধুরী রচিত বোর্ড ব্যাকরণ বইটি ভালো করে পড়তে হবে। পাশাপাশি বাজারের ভালো মানের গাইড বই পড়া যেতে পারে। বিজ্ঞানে ভালো করার জন্য নবম-দশম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান বই ও বাজারের ভালো মানের চাকরির গাইড বই পড়া যেতে পারে। এই পরীক্ষায় যেহেতু সব প্রতিযোগীই আইনের শিক্ষার্থী, তাই আইন বিষয়ে সবারই কমবেশি জানা আছে। এ জন্য মূল লড়াইটা হয় সাধারণত ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ওপর। তাই এ বিষয়গুলোতে হেলাফেলা করলে চলবে না।’

লিখিত
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। গড়ে ৫০% নম্বর পেলে তিনি লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। তিনি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোনো পরীক্ষার্থী কোনো বিষয়ে ৩০ নম্বরের কম পেলে তিনি লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন বলে গণ্য হবেন।

মৌখিক পরীক্ষা
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরাই শুধু মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। মৌখিক পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের ওপর। মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর ৫০।

সুযোগ-সুবিধা
একজন সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কেমন সুযোগ-সুবিধা পান? জানতে চাইলে খুলনার সহকারী জজ মো. ফারুক আজম বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি চাকরির সর্বোচ্চ বেতন স্কেলে চাকরিতে যোগদান করবে। বেসিক বেতন পাবে ৩০৯৩৫ টাকা।

এই চাকরিতে যোগদানের আগে যদি তাঁর আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের সনদ থাকে, তাহলে সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্তি একটা ইনক্রিমেন্ট পাবেন।

তখন বেসিক বেতন স্কেল হবে ৩২৪৯০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য আর্থিক সুবিধাসহ বিচারিকভাতা হিসেবে মাসিক ৫০০০ টাকা পাবেন। একজন সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সর্বসাকল্যে মাসে ৫২০০০ টাকার বেশি বেতন পাবেন। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।

আবেদনপ্রক্রিয়া চলছে
প্রার্থীকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের ওয়েবসাইটের (.িনলংপ.মড়া.নফ) মাধ্যমে আবেদনপ্রক্রিয়া চলছে। কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ফরম-১ পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে ৩০ অক্টোবর ২০১৯ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে। আবেদন সম্পন্ন করার পর পরীক্ষার নিবন্ধন ফি ১২০০ টাকা টেলিটক সংযোগের মাধ্যমে ৩০ অক্টোবর বিকেল ৫টা পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। সব প্রার্থীর বয়স ১ জুলাই ২০১৯ তারিখে অনধিক ৩২ বছর হতে হবে। আবেদন করার শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বলা হয়েছে, কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ন্যূনতম দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির এলএলএম ডিগ্রি থাকলে আবেদন করতে পারবেন। আইন বিষয়ে স্নাতক অথবা স্নাতক (সম্মান) অথবা এলএলএম ডিগ্রি পরীক্ষায় অবতীর্ণ কোনো প্রার্থী আবেদন করতে চাইলে ওই পরীক্ষা আবেদনপত্র দাখিলের শেষ তারিখে অথবা তার আগে শেষ হতে হবে। যাঁরা বিদেশি ডিগ্রি দিয়ে আবেদন করতে চান, তাঁদের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অর্জিত আইন বিষয়ে কোনো ডিগ্রিকে সহকারী জজ পদের জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার (দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির এলএলএম ডিগ্রি) সমমান বলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ঘোষিত হতে হবে।

জেনে রাখা ভালো
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ৮ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার কেন্দ্র ও সময়সূচি কমিশনের ওয়েবসাইট (www.bjsc.gov.bd)-এ যথাসময়ে পাওয়া যাবে। পরীক্ষার ফি জমাদানের ক্ষেত্রে টেলিটক সিমের ফোন দিয়ে প্রথম ধাপে মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করুন BJSC স্পেস User ID (উদাহরণ : BJSC 220293) পাঠিয়ে দিন 16222 নম্বরে। টেলিটক মেসেজের মাধ্যমে প্রার্থীকে নাম, পদবি ও পিন জানাবে। দ্বিতীয় ধাপে প্রার্থীর টেলিটক সিমের ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে YES স্পেস পিন নাম্বার (উদাহরণ : BJSC YES 52364847) পাঠিয়ে দিন 16222 নম্বরে।

চূড়ান্ত ফলাফল ও সুপারিশযোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুতকালে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ, বরখাস্তকরণ প্রভৃতি) বিধিমালা ২০০৭-এর সর্বশেষ বিধান অনুসৃত বা প্রযোজ্য হবে। বিগত বছরগুলোতে দেখা গেছে, বিজেএস প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষা এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে থাকে। সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার পর যাঁর পোস্টিং দেওয়ানি আদালতে হয়, তাঁর পদবি হয় ‘সহকারী জজ’। আর যাঁর পোস্টিং হয় ফৌজাদারি আদালতে, তাঁর পদবি হয় ‘জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট’।


সর্বশেষ সংবাদ