করোনাকাল

বন্ধ ক্যাম্পাসে যা যা মিস করি

  © টিডিসি ফটো

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য তার ক্যাম্পাস হলো স্বপ্নের জায়গা, ভালো লাগার জায়গা আর ভালোবাসার জায়গা। হাজারো আড্ডা, দুষ্টামী, বন্ধুত্ব, খেলাধুলা, সংস্কৃতির এক রঙিন দুনিয়া। আর তার সাথে তাল মিলিয়ে চলে ক্লাস, পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন আর পড়াশোনার ব্যস্ততা। করোনাকালে সাড়ে ৪ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দীর্ঘ এই ঘরবন্দী সময়ে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা কী সবচেয়ে বেশি মিস করেন? জানতে চেয়েছিল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। তুলে ধরছেন গবি প্রতিনিধি তানভীর আহম্মেদ-

ক্যাম্পাসের দিনগুলো ঠিকঠাকই চলছিলো। কিন্তু হুট করেই পৃথিবীতে করোনার আবির্ভাব। বাংলাদেশেও তা ছড়িয়ে পড়ে।  যার দরুণ ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৮ বছর পরিবারের সাথে কাটানোর পর যখন ভার্সিটি লাইফ শুরু হলো তখন আমার দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে গড়ে উঠলো এই ক্যাম্পাস। যেখানে গেলে শান্তির খোরাক মিলে। এই করোনাকালীন সময়ে বাসায় থাকার ফলে ক্যাম্পাসটাকে খুব বেশি মিস করছি আর তার সাথে বন্ধুদেরও খুব মিস করছি। অনেক দিন হয়ে গেছে ওদের সাথে একসাথে বসে আড্ডা দেয়া কিংবা চা খাওয়া হয় না। ক্লাসের ফাঁকে যখন সময় হতো সবাই মিলে ক্যান্টিনে বসে এক সাথে আড্ডা দিয়েছি- এইটা খুব মিস করছি এই সময়টাই।তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাদামতলা একটা ভালোলাগার জায়গা সেই জায়গায় বসে ভালোই গল্প করা হতো। ক্যাম্পাসের ঝালমুড়ি মামার ঝাল মুড়িটা অনেক মিস করছি। আর খুব বেশি মিস করছি ক্যাম্পাসের গানের আড্ডাটা। সময় হলেই গানের আড্ডায় অংশ নিতাম ভালো ছিলো দিনগুলো। আবার কবে যাবো সেই প্রিয় ক্যাম্পাসে যা এখনো অজানা। ধরনী সুস্থ হও আমাদেরকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নাও।

নাহিন ইসলাম লাম্মি
চতুর্থ সেমিস্টার, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ 

ক্যাম্পাস মানে আমার কাছে ভালোবাসার একটা জায়গা। এখানে আমি সুন্দর কিছু সম্পর্ক পেয়েছি। কেউ রক্তের সম্পর্ক না। কিন্তু তাদের সাথে সম্পর্ক এর থেকেও বেশি কিছু। আমি বড় বোন পেয়েছি, পেয়েছি বড় ভাই। আর যারা আমার অনেক খেয়াল রাখে, আমাকে ভালোবাসে। কিছু ছোট ভাই, বোনও পেয়েছি। ক্যাম্পাসে ক্লাসের পর তাদের সবার সাথে দারুণ সময় কাটানো হতো। অনেক দিন ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় এখন তাদের সবাইকেই খুব মিস করি। তবে সবচেয়ে বেশি মিস করি বন্ধুদের সাথে বাদামতলায় বসে আড্ডা দেয়া। পিঠার দোকানের পিঠা, ভেলপুরি, ফুচকা, ক্যান্টিনের সিঙ্গারা সবই মিস করি অনেক। ক্লাসের সিট নিয়ে বন্ধুদের সাথে যুদ্ধ সবটাই মিস করি। ক্যাম্পাসটা হচ্ছে আমার স্বাধীনতা, এই লকডাউনে এই স্বাধীনতাটা অনেক মিস করি। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি আবার সেই সবুজেঘেরা, বাদামী দেয়ালের ভিতর ক্লাস করবো, বাদামতলায় আড্ডা দিবো আর সেই প্রিয় মুখগুলো দেখবো।

সানজিদা আক্তার সিথী
৫ম সেমিস্টার, ফার্মেসী বিভাগ

গণ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নজর কাড়া সৌন্দর্য প্রতিদিনই উপভোগ করতাম। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের বাহিরে থাকায় এখন খুব মিস করছি প্রাণের ক্যাম্পাসকে। বাদাম তলার সেই আড্ডা, সৌন্দর্য নিত্যদিনের উপভোগ্য ছিল যা এখন খুব মিস করি। তার সাথে সবুজ মাঠের খেলাধুলার আমেজও আর অনুভব করতে পারছি না। ক্লাসের ফাঁকে ক্যান্টিনের গরম গরম সিঙ্গারা আর তার সাথে দলবেঁধে ক্যান্টিনে গিয়ে খাওয়া আর আড্ডার সময়টা ছিল অত্যান্ত আনন্দের। সবটাই এখন খুব মিস করি। নামাজের সময় হলে বড়ভাই, ছোট ভাই, শিক্ষকরা সবাই মিলে ক্যাম্পাসের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার সেই সোনালী সময়টাকেও এখন খুব মিস করি।

ফেসবুকের আলাদা জগতে আড্ডা দেওয়া, বন্ধু বানানো সহজতর প্রক্রিয়া হলেও তাতে কি আর এখন মন ভরে? তাই তো প্রতিদিন গুনছি ক্যাম্পাসে ফেরার দিনক্ষণ। আশায় আছি, খুব দ্রুতই আবারো ফিরতে পারবো সেই ব্যস্ত, বিষন্ন ক্লাসরুমে, ল্যাবে আর স্যারদের চোখরাঙানো দুনিয়ায়। তার সাথে গল্প, আড্ডা, দুষ্টামি এবং দলবেঁধে ছুটে বেড়ানোর সেই পুরানো সময়টাতে।

তানভীর আশরাফ তাইন
৭ম সেমিস্টার, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ

ক্যাম্পাস বন্ধে সময় কাঁটছে না। সবাইকে খুব মিস করছি। গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মায়া কখনও ভোলা যাবে না। ক্যাম্পাসের মায়া জড়ানো রুপে বার বার প্রেমে পড়ে যাই। প্রিয় বাদাম তলাকে ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ে। ক্যাম্পাসের আড্ডা, ক্লাসের কোলাহল চোখের সামনে ভাসে। ক্যান্টিনের গরম গরম খাবার আর খেলার মাঠের সেই উত্তেজনার জন্য সব সময় মন উতলা হয়ে থাকে। প্রত্যাশা করি দ্রুতই প্রাণ ফিরে পাবে প্রাণের ক্যাম্পাস। খুব শিগগিরই প্রাণের উচ্ছ্বাসে সবাই আবারো মিলব প্রাণের ক্যাম্পাসে।

তানজিনা ইয়াসমিন মেঘলা
২য় সেমিস্টার, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে একবারও আমার মনে হয়নি আমি কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। আমার স্মৃতিচারণ করার পরিসীমা এই বড় ক্যাম্পাসের মতই বড়। আমি সবথেকে বেশি যেটা মিস করছি সেটা হলো আমার সহপাঠীদের, শিক্ষকদের  আমাদের ক্লাসরুম ও ল্যাবরেটরি। বেশির ভাগ সময় কেটেছে ওখানেই। নিয়মিত ক্লাস ও টিউশন থাকার কারণে বাহিরে ঘোরাঘুরি কম হয় তবুও স্মৃতি জড়িয়ে আছে পুরো ক্যাম্পাসকে ঘিরেই। তার একটা বড় অংশ আমাদের ছোট্ট ক্যান্টিনকে ঘিরে। ওখানে বসে আড্ডা, খাওয়া দাওয়া, এমনকি পড়াশুনাও হয়েছি টুকটাক। মামির দোকানের পিঠা, বেগুনের চপ না খেলে আমার দিনই শেষ হতোনা। আর মিস করছি লাইব্রেরি।যেটা আমার অনেক প্রিয় একটা জায়গা। খেলার মাঠের কথা না বললেই নয়, ক্লাস এর অবসরে খেলা দেখে যে আনন্দটা পেতাম তা হয়তো লিখে বোঝানো যাবেনা।

তুলিকা সমদ্দার
৭ম সেমিস্টার, ফার্মেসি বিভাগ

অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা আমাদের ক্যাম্পাস। গেট থেকে শুরু করে একাডেমিক ভবন পর্যন্ত সারিবদ্ধ অনেক বাদাম গাছ এ ক্যাম্পাসের। যা প্রতিদিনই আমার মন জুড়াতো। এই গাছ তলায় প্রায়শই বসতাম, আড্ডা দিতাম। এখন খুব মিস করছি জায়গাটা। পাশেই বিশাল খেলার মাঠ আছে। এখানে চলা খেলাধুলার উত্তেজনা অনুভব করতাম। এখন চাইলেই সেই অনুভূতি আর পাওয়া হচ্ছে না। সব বন্ধুরা মিলে যেখানে আড্ডা দেয়া হতো সে জায়গাগুলোকে খুব মিস করি, মিস করি সেইসব বন্ধুদের। ক্লাস শেষ করেই সবাই একত্রিত হয়ে ৫ম তলায় লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়া হতো। লাইব্রেরিকেও অনেকটা মিস করি। সব মিলিয়ে পুরো ক্যাম্পাসকেই অনেক মিস করি। আবার কবে ফিরবো, আগের মত স্বাভাবিক ক্যাম্পাস জীবনে সেই আশায় আছি।

মো: রাকিবুল ইসলাম 
৫ম সেমিষ্টার, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ


সর্বশেষ সংবাদ