ট্রাস্টি সদস্য মুজিবুরের লুণ্ঠনে বিপর্যস্ত কক্সবাজার ইউনিভার্সিটি

জমি কেনা ও ভবন নির্মাণের নামে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (সিবিআইইউ) ট্রাষ্টি বোর্ড সেক্রেটারী লায়ন মো. মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মুজিবুর রহমানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মামলায় সাক্ষী হিসাবে রয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ।

গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সদর থানায় দায়ের করা মামলার অন্য আসামীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অর্থ পরিচালক মো. আব্দুস সবুর ও মোহাম্মদ আবদুল মাবুদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ মনির উদ্দীন আরিফ।

টাকা আত্মসাতের বিস্তিারিত তথ্য তুলে এজাহারে বলা হয়, জমি কেনার নামে বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগার থেকে এক কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন মুজিবুর রহমান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে এখনও পর্যন্ত কোনো জমি কেনা হয়নি। একইভাবে জমি কেনার আগেই প্রতারণার মাধ্যমে ভবণ নির্মাণের নামে একই হিসাব হতে এক কোটি ৬৯ লক্ষ ৬৭ হাজার ৭৭৬ টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রশাসনিক অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।

এজাহারে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এরপর  লায়ন মো. মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের পক্ষে যোগাযোগকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগে প্রতারণার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে নিজের নামে একটি পত্র হাসিল করেন। এর মাধ্যমে সে নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অজান্তে লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমান তার সহযোগীদের মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। এমনকি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান  সালাহ উদ্দিন আহমেদ সিআইপি’র সাক্ষর জাল করে অনেক রেজুলেশন প্রস্তুত পূর্বক ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি ক্রয়ের অজুহাতে বিশ্ববদ্যালয়ের নামীয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি হতে প্রাপ্ত টাকা আত্মসাৎ করেন।

লায়ন মোঃ মুজিবুর রহমানের জালিয়াতির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন খোদ ট্রাস্টি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি সেখানে লেখেন, ‘আমি মুজিবুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজপত্র প্রস্তুত করার জন্য সাচিবিক কাজের দায়িত্ব দেই। মুজিবুর রহমান তার পরিবারের লোকজন আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রথম আমাকে তার এই দুর্নীতির বিষয়ে অবহিত করে। তারপর মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মহোদয় লিখিতভাবে তার দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানালে আমি তাকে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করি। তারপর ট্রেজারার মহোদয় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতিবাজদের নিকট হতে পুনরুদ্ধার করে কক্সবাজারের একটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে।’

অভিযোগ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি এবং মামলার অন্যতম আসামি মুজিবুর রহমান জানান, ‘তিনি মামলার অভিযোগের সাথে কোনভাবেই জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।’

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আবু মো. শাহজাহান কবির জানান, কক্সবাজারের একমাত্র উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলাটি রেকর্ড করে গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ