টিউশন ফি আদায় করতে পারছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

  © লোগো

চলমান করোনা সঙ্কটে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জু্রি কমিশন (ইউজিসি)। সেখানে চলমান সেমিস্টার সম্পন্ন করার বিকল্প দুটি প্রস্তাব, অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা চালানো, নতুন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি এবং ১৪টি সাধারণ নির্দেশনাসহ মোট ২৩ নির্দেশনা দিয়েছে ইউজিসি।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইউজিসির এসব নির্দেশনা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য হিতে বিপরীত হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে আগামী জুলাইয়ের আগে নতুন সেমিস্টার শুরু করতে পারবে না। যেটা চলতি মে মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আয়ের বড় একটি অংশ সেমিস্টারের শুরুতে আসে। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশনা মেনে সেটি শুরু করতে না পারায় বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। 

দ্বিতীয়ত, সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ফি থেকে বড় ধরনের আয় হয়। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিতে পারবে না। গ্রেডিং করতে হবে অ্যাসাইনমেন্ট কিংবা অন্য কোনো উপায়ে। সে হিসেবে ছাত্রদের কাছে টাকা চাওয়ার মাধ্যম কী হবে- সেটি নিয়েও চিন্তায় পড়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়।

তৃতীয়ত, টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ না দেওয়া নির্দেশনা তো রয়েছেই। সবমিলিয়ে নানামুখী নিয়মের ঘেরাটোপে পড়ে টিউশন ফি আদায় করতে পারছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যদিও এরই মধ্যে দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় ফি আদায়ের নোটিশ দিয়েছে। এরই একটি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ)। গত ৮ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম ফজলুল হক স্বাক্ষরিত এক নোটিশে শিক্ষার্থীদের আগামী ১৫ মে’র মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর জানান, ইউজিসি যেখানে মানবিক হতে বলেছে, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি সেখানে বকেয়া টাকা পরিশোধ করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য।

তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই এখনও পর্যন্ত টিউশন ফি তেমন কোনো নির্দেশনা দেয়নি। যদিও বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সীমিত পরিসরে ফি আদায়ের চিন্তা-ভাবনা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনানী এলাকায় গড়ে ওঠা এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ক্রান্তিকাল এনে দিয়েছে করোনা সঙ্কট। তার ভাষ্য, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এর আগে তারা টিউশনি ফি আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর আগেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হওয়ায় ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তারা।

তিনি আরো বলেন, নতুন নির্দেশনা টিউশন ফি আদায়ে হয়তো ইউজিসি নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, কিন্তু বিষয়টি এখন ‘পাবলিক পারসেপশন’। চাইলেও সেমিস্টার ফি আদায়ের নোটিশ দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও সীমিত পরিসরে চিন্তা-ভাবনা আছে।

প্রায় একই কথা জানালেন ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থিত মধ্যম ক্যাটাগরির এক প্রাইভেট  বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যান। তার বক্তব্য, আমাদের এমনিতেই ছাত্র পেতে সমস্যা হয়। শিক্ষক-স্টাফদের বেতন-ভাতাদির বিষয় তো রয়েছেই। তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উল্টো নির্দেশনা— সবমিলিয়ে তারা টিউশন ফি আদায়ের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগছেন।  তিনি জানান, প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য হয়তো এই সমস্যা নেই, কিন্তু মধ্যম ও নিম্ন ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এটা বড় সমস্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি আদায় করতে না পারা ও নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ থাকার অজুহাতে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়মিত বেতন পরিশোধ করেননি। অর্ধেক কিংবা ৭০% বেতন পরিশোধ করেছেন, এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে বেশ কয়েকটি। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, অন্তত ঈদের বিষয়টি চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনেক সিদ্ধান্ত শিথিল করতে পারত।

যদিও ইউজিসি’র সূত্র জানায়, আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও শুধুমাত্র করোনার দোহাই দিয়েই কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছে না। এর মধ্যে মার্চ এমনকি এপ্রিল মাসেও আংশিক বেতন দিয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ইউজিসি জানায়, তাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে তাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা না দেয়ার অবস্থায় কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কমপক্ষে আগামী এক বছর শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই আছে। দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে কেন তারা বেতন আটকে দিচ্ছেন এটা বোধগম্য নয়।  

এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম এর আগে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির এই সময় আরো দীর্ঘ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ারও সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের যেন সময় নষ্ট না হয়— সেজন্য আমরা বিকল্প পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা বলেছি। সেক্ষেত্রে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের চলতি সেমিস্টারের গ্রেডিং করতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র চলতি সেমিস্টারর জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশ্বের অনেক দেশ এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের ফলাফল দিয়ে থাকে। আমরা সার্বিক দিক বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন,  আমরা চাই, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানবিক হোক। দেশব্যাপী সঙ্কট চলছে। এ সময়ে টিউশন ফি’র জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ প্রদান কোনোভাবেই কাম্য নয়। মূলত সেটা বিবেচনায় নিয়েই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ