নর্থ সাউথে ট্রেজারার পদে ‘রহস্যজনক’ নিয়োগ, যোগদানের দুই দিনের মাথায় প্রত্যাহার

লোগো
লোগো

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ট্রেজারার পদে এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদকে নিয়োগ দেয়া ‘রহস্যজনক’ সে আদেশ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ট্রেজারার নিয়োগের জন্য নর্থ সাউথ ট্রাস্টি বোর্ডের পাঠানো প্রস্তাবে এম আবদুস সামাদ আজাদকে অযোগ্য বলে মত দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন। সরকারের সব শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শেও তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু কোনো একটি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে ফাইল এসে নাম বদলে গত ১০ মার্চ তাকে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়।

নিয়োগের পর থেকেই নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে এম আবদুস সামাদ আজাদকে নর্থ সাউথের  ট্রেজারার পদে নিয়োগ দেয়া সেই আদেশ গতকাল বুধবার বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও গত ১৬ মার্চ বিকেলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানও করেছেন।

জানা যায়, ট্রেজারার পদের জন্য আবদুস সামাদ আজাদের যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। তাঁর অধ্যাপনায় কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এমনকি তিনি যোগ্য নন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এর পরও তিনি ঠিকই ট্রেজারার পদে নিয়োগ পেয়েছেন। ইউজিসি সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য এনএসইউয়ের ট্রেজারার পদে তিনজনের নাম পাঠানো হয়। তালিকার এক নম্বরে ছিলেন অধ্যাপক ড. এম ইমদাদুল হক। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। এরপর ২০১০ সাল থেকে তিনি নর্থ সাউথেই অধ্যাপনা ও প্রশাসনিক নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তালিকার দুই নম্বরে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রউফ। আর তিন নম্বরে ছিলেন এয়ার কমোডর (অব.) এম আবদুস সামাদ আজাদ। ইউজিসি যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের ১৯ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। সেখানে তারা অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার দিক থেকে এক ও দুই নম্বর ক্রম ঠিক রাখে। আর তিন নম্বরে থাকা ব্যক্তি আবদুস সামাদ আজাদের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা নেই বিধায় তিনি এই পদের জন্য যোগ্য নন বলে উল্লেখ করে। ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০-এর ৩৩ ধারার ২ উপধারা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে জানায়, ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্য ন্যূনপক্ষে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ অন্যূন ১৫ বছরের অধ্যাপনা, প্রশাসনিক বা আর্থিক ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু আবদুস সামাদ আজাদের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা থাকলেও অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা নেই।

জানা যায়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার নিয়োগ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথমে যোগ্যতাসম্পন্ন তিনজনের নামের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ইউজিসিতে পাঠায় মন্ত্রণালয়। ইউজিসি যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায়। যাচাই-বাছাইয়ে তিনজনই যোগ্য হলে মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সেই ফাইল যায় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে। রাষ্ট্রপতি বা আচার্যের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর আবার তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত আসে। সব শেষে মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

এ প্রসেঙ্গে ইউজিসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যদি তিনজনের তালিকার একজন যোগ্য না হন তাহলে আইন অনুযায়ী পুরো ফাইলটিই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত পাঠানোর কথা। কারণ রাষ্ট্রপতি তিনজন যোগ্য ব্যক্তির মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ প্রদান করেন। সাধারণত ইউজিসি থেকে যে ক্রম অনুযায়ী তালিকা পাঠানো হয়, সেখান থেকে এক নম্বরে থাকা ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও রহস্যজনকভাবে যোগ্যতা না থাকা ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেয়া হলো।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, যোগ্যতা ছাড়াই আবদুস সামাদ আজাদ কিভাবে নিয়োগ পেলেন তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী এক নম্বরে থাকা ব্যক্তিকেই ট্রেজারার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের সব শীর্ষ পর্যায়ের সম্মতি ছিল। কিন্তু কোনো একটি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যায়ে ফাইল এসে নাম বদল করে দেওয়া হয়।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল হাসান বলেন, আদেশটি বাতিল করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান লায়ন বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতো কাজ করি। যোগ্যতা যাচাই করা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসির কাজ।’


সর্বশেষ সংবাদ