হিজড়াদের সঙ্গে ভালোবাসা দিবস উদযাপন শিক্ষার্থীদের

ব্যতিক্রমধর্মী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালন করেছে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) শিক্ষার্থীরা। মা-বাবা, ভাই-বোন, শিক্ষক কিংবা বন্ধু নয়, কোন আপন মানুষও নয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উদযাপন করা হয়েছে ধামরাইয়ে অবস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের কমিউনিটির সাথে।

শুক্রবার ডা. এড্রিক বেকার মানব কল্যাণ সংঘের আয়োজনে কেক কাটার মাধ্যমে ভালোবাসা বিনিময়ের সূচনা করা হয়। এছাড়াও এসো সচেতন হই সোসাইটি (এসই) এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি অনন্যা বনিকের সাদা কালো হিজরা উন্নয়ন সংস্থা ইত্যাদি সহযোগী সংগঠনগুলো একসাথে মিলিত হয়ে ভালোবাসা বিনিময় করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসো সচেতন হই সোসাইটির চেয়ারম্যান ও সমাজকর্মী মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি বৈচিত্র্যময় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর নৈতিক শিক্ষা, মানবিকতা, কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেন।

একটি দেশের উন্নয়ন যেমন একক কোন মানদন্ডের উপর নির্ভর করে বলা যায় না, তেমনি কোন বিশেষ জনগোষ্ঠির সাবির্ক কল্যাণ ব্যতিরেকে একটি দেশকে নৈতিক আদর্শিক দেশ বলা যায় না। অনেক দিন ধরে রাষ্টীয়ভাবে এই বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠি হিজড়াদের উপর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও কার্যকরী কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের রূপ নেয়নি।

বক্তারা আরো বলেন, পথে ঘাটে বিভিন্ন জায়গায় যখন এই জনগোষ্ঠি দু’বেলা দু’মুঠো ভাত, বাসা ভাড়া এবং জীবন চলার জন্য আমাদের কাছে হাত বাড়িয়ে দেয়, তখন আমরা অনেকেই ওদের প্রতি করে বসি নেতিবাচক মন্তব্য। আর যদি সাহায্য চাওয়ার পক্রিয়াটি হয়ে থাকে ভিন্ন ঢংয়ের, তাতে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করতেও ভুল করেন না কেউ কেউ। কিন্তু আমরা যদি ভেবে দেখি, ওদের জন্য এই রাষ্ট্র এই সমাজ এই পরিবার ওদের জীবন চলার জন্য কি কোন বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছি? দিয়ে থাকলেও তা খুবই সামান্য।

ডা. এড্রিক বেকার মানব কল্যাণ সংঘের পরিচালনা কমিটির সদস্য রিয়াজুল ইসলাম বলেন,আমরা মনে করি হিজড়াদের সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য মানেই হিজড়া সন্তানটি পরিবারের বোঝাস্বরুপ। আমরা অনেকদিন ধরেই এই কমিউনিটির জন্য কোন কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করছি। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে তা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, হিজড়া সন্তানটিকে তার পরিবারে অর্থাৎ বাবা-মা’র সাথে একসাথে থাকতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে প্রতিবেশী বা আত্ময়ীস্বজনের নেতিবাচক মন্তব্য। এমনকি হিজড়া সন্তানসহ পরিবারটিকে একঘরে বা বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করার কারণে পরিবার থেকে বিতাড়িত হতে বাধ্য হয় হিজড়া সন্তানটি। মা-বাবা, ভাই-বোনের মায়ামমতা ভালোবাসা ছেড়ে একসময় আশ্রয় নিতে হয় হিজড়া কমিউনিটিতে। শুরু হয় তার জীবনে বেঁচে থাকার সংগ্রাম। একসময় হয়ে পড়ে এই সমাজের মানুষের চোখে উপহাসের পাত্র। আমরা কখনো ভাবী না হিজড়া সন্তানটিও আমাদের সন্তান।

পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে নানান গল্প ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষের দিকে উপস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ