‘কেউ আমাদের মতাদর্শবিরোধী হলে মারবই’

মারধরে অভিযুক্ত আইন বিভাগের ছাত্র উ চো মারমা
মারধরে অভিযুক্ত আইন বিভাগের ছাত্র উ চো মারমা  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসমান (রা.) হলে রড, লাঠি ও স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় হয় বলে জানান আহত ওই শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগ পরিচয়ের বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কমিটি থাকাতো দূরের কথা, আইআইইউসির নামই ভালোভাবে জানেন না তিনি।

নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী হলেন কুরআনিক সাইন্সেস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র আদনান। আর মারধরে অংশ নেন ছাত্রলীগ নামধারী আইন বিভাগের ছাত্র উ চো মারমা, রবিউল ইসলাম রনি, শফিউল ইসলাম, অনিক ও মৃদুল।

মারধরে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নামধারী এসব নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্নভাবে ছাত্র-শিক্ষকদের হয়রানি চাঁদাবাজীসহ বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্রলীগ পরিচয়ে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছে অভিযুক্তদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র উ চো মারমার। তিনি জানিয়েছেন, ‘আদনান ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, সে আমাদের মতাদর্শের বিরোধী। আর আমরা আমাদের মতাদর্শবিরোধী যে কাউকে মারবই। তার শিবির করার সব প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।’

একজন নাগরিকের নিজ মতাদর্শ পালনের অধিকার বাংলাদেশ সংবিধান দেয়। আপনারা সেটা কিভাবে খর্ব করেন- এমন প্রশ্নে উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বলেন, কিসের সংবিধান। সংবিধানের আগে থেকেই আমাদের মতাদর্শ চলে আসছে। ওকে মেরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি এটা ওর সৌভাগ্য।

এ ঘটনায় খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ছাত্রকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বেধড়ক মারধর করা হয় আদনানকে

এর আগে গত (২২ জানুয়ারি) মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতনের পরে পুলিশ হেফাজতে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের গেস্টরুম শেষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান শুরু করলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন এসে তার অনশন ভাঙ্গিয়ে নেন।

একইভাবে ছাত্রলীগে নৃশংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। গত ৬ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে ‘শিবির সন্দেহে’ পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সেদিন রাতে বুয়েটের শের-ই-বাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার মাঝামাঝি সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে আইআইইউসি শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটগুলো উপজেলা সমমান হিসেবে কাজ করে। তবে এখানে কমিটি থাকাতো দূরের কথা, আইআইইউসির নামই ভালোভাবে আমি শুনিনি। কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কোন অপরাধ করে থাকে তবে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাওছার আহমেদ দ্যা ডেইল ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটতে আমি শুনিনি। ঘটনার সময় জরুরি কাজে আমি ঢাকায় ছিলাম। আমরা এখন বিষয়টি জেনেছি। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবো।


সর্বশেষ সংবাদ