২০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের পরিবহনে নেই কোন ব্যবস্থা

  © টিডিসি ফটো

প্রতিষ্ঠার বিশ বছর পেরিয়ে গেলেও সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো পরিবহনের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এমতাবস্থায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই রাজধানীর অদূরে সাভার উপজেলার নলামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে গণবিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ‘শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো পরিবহনের ব্যবস্থা করবে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন’ মর্মে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়।

এ কারণে প্রতিনিয়ত পরিবহন জনিত বিভিন্ন সমস্যা ও ভোগান্তিতে পড়লেও কখনো জোরালোভাবে পরিবহনের দাবিতে মুখ খোলেনি শিক্ষার্থীরা। তবে সম্প্রতি দেশে সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবহন শ্রমিকদের অসদাচরণ, পাবলিক বাসে অতিরিক্ত ভোগান্তি, ভাড়া নিয়ে বিতর্ক, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, সময়মত ক্লাসে পৌঁছাতে না পারা এবং বাসে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ এবং হত্যার মতো ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট পরিবহন চালু করার ব্যাপারে শিক্ষার্থীরা খুবই উদগ্রীব হয়ে পড়েছে।

দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন বেহাল অবস্থায়ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেদের নির্দিষ্ট পরিবহনের প্রতি কোন সু-দৃষ্টি না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য মতে, সকালে চাকরিজীবিদের অফিস সময় থাকায় লোকাল বাসে প্রচুর ভিড় থাকে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছানো এক প্রকার যুদ্ধ করার মতো। এতো যুদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যাওয়া সত্যিই খুবই দুভার্গ্যের। এছাড়াও বাসে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার নিয়ম থাকায় লোকালবাসগুলো সহজে বাসে তুলতে চায় না। অনেক লোকাল বাস আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী বাসস্ট্যান্ডে থামতে চায় না এর ফলে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে থাকতে হয়।

ভাড়া নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার অভাবে মালিকের দোহাই দিয়েই পরিত্রাণ পেয়ে যাচ্ছেন বাসের হেলপার আর ড্রাইভাররা। এছাড়া বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত— বাসে যৌন হয়রানি নিয়ে নারী শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছেই না।

মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত এক অভিভাবক বলেন, মেয়েকে নিয়ে আমি অনেক স্বপ্ন দেখি। আমার স্বপ্নের বাস্তবায়নে মেয়েকে অনেক দূরে লেখাপড়া করতে পাঠিয়েছি। কিন্তু বাসে প্রতিনিয়ত নারীর প্রতি অসাদাচরণ ও যৌন হয়রানির মতো ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তুলছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নির্দিষ্ট পরিবহনের ব্যবস্থা করতো তাহলে অনেকাংশে নির্ভর হতে পারতাম। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত দ্রুত তাদের জন্য নির্দিষ্ট পরিবহনের ব্যবস্থা করা।

গণবিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই ঢাকার মিরপুর, গাজীপুর, আব্দুল্লাহপুর, হেমায়েতপুর, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জ এলাকা থেকে যাতায়াত করে থাকে। সাভার-আশুলিয়া এবং সাভার-ধামরাই এলাকা শিল্পাঞ্চল হওয়ায় কারণে সকালে অফিসগামী লোকের প্রচুর ভিড় থাকে। ফলে বাসে যাত্রীর প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়।

তাই দূর থেকে যাতায়াতকারী এসব শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম ও মানুষের প্রবল চাপ সাথে লোকাল বাসের যত্রতত্র যাত্রী বোঝাই করার প্রতিযোগিতায় প্রচুর সময় নষ্ট হয়। ফলে সকালের ক্লাসে সময়মতো উপস্থিত হতে পারে না শিক্ষার্থীরা।

সাভার থেকে যাতায়াতকারী ভেটেরিনারি বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া দৃষ্টি বলেন, বাসা থেকে বের হয়েই প্রতিদিন সকালে বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার পরও সিটিং সার্ভিস বাসগুলো নিতে চায় না। বাধ্য হয়ে যখন লোকাল বাসে উঠি তখন কেমন বিব্রত অবস্থায় পড়ি, তা বুঝানোর ভাষা আমার জানা নেই! শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস থাকলে, এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।

এদিকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন হোস্টেল ও মেসের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যুৎ সমস্যা রয়েছে। নিয়মিতভাবে সপ্তাহে দু-একদিন সারাদিন বিদ্যুৎ থাকে না। মাঝে মাঝে ঘোষণা ছাড়াও অনেক সময় লোডশেডিংয়ে পড়তে হয়। তাছাড়া এসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্কের ঝামেলাও প্রচুর। তাই এ ধরনের সমস্যা এড়াতে দূরে যেতে চাইলেও পরিবহন না থাকাতে বাধ্য হয়েই অবস্থান করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

দীর্ঘদিন ধরে চলমান পরিবহন সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি জানান, আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে দূর থেকে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি ছিল না।

তাই প্রশাসন পরিবহনের ব্যবস্থা করেনি। তবে এখন যেহেতু এ ধরনের শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই তাদের সবরকম সুবিধা করে দেয়া কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এজন্য আমি বিষয়টি শিগগিরই ট্রাস্টি বোর্ডের মিটিংয়ে উত্থাপন করবো।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে, পরিবারের অনেক আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। নিজেদের সর্বোচ্চ ঢেলে দেই স্বপ্নপূরণের পথে। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে কোন সমস্যা যেন বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়, জ্ঞান আহরণ যেন কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয় এবং কর্তৃপক্ষ যেন সবার জন্য জ্ঞান আহরণের পথ সুগম ও সহজ করে দেয় সেই প্রত্যাশাই কামনা করছে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী।


সর্বশেষ সংবাদ