বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭% আসনই ফাঁকা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আসন পেতে তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে হয় একজন শিক্ষার্থীকে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ বেসরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবু আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ৫৭ শতাংশ আসনই ফাঁকা ছিল। 

উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী না পাওয়ার অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না কেউই। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। তারা বলছেন, বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই গড়ে উঠছে রাজনীতিক কিংবা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। শিক্ষানুরাগী কিংবা শিক্ষাবিদদের অনুপস্থিতিতে অনেকটা অপরিকল্পিত ও অপ্রস্তুত অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মৌলিক অবকাঠামো গড়ে না তুলে ভাড়া ভবনে কয়েকটি কক্ষ ও হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক নিয়েই শুরু করা হচ্ছে কার্যক্রম। এমনকি কার্যক্রম শুরুর পরও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কলেবর বাড়ানো হয় না। এসব কারণেই আসন অনুপাতে শিক্ষার্থী পাচ্ছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।

ইউজিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৯৫টি। এর মধ্যে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বাইরে ছিল। আর চালু ৯০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা ইউজিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। তাই বাকি ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসন ও ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ইউজিসির প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ৮৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৬। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয় ওই বছর সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৮৭৫ জন। সে হিসাবে ২০১৭ সালে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্ধেকের বেশি আসনই খালি ছিল।

শিক্ষার্থী না পাওয়ার কারণ বিষয়ে কথা হয় ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেনের সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ১০-১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুব ভালো করছে। তবে বেশির ভাগই চলছে উল্টো পথে। অবকাঠামো খুবই নিম্নমানের, শিক্ষক তো নেই বললেই চলে। এই যখন অবস্থা, তখন শিক্ষার্থী না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। শিক্ষার্থীরা মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানহীন ডিগ্রি নিয়ে চাকরির বাজারে মূল্যায়িত না হওয়ার ভয়েইএসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে না। একমাত্র গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে এ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। 


সর্বশেষ সংবাদ