দুঃখীর পাশে ছাত্ররা, তিন বছর পর নতুন পোশাক পরবে আকবর (ভিডিও)

অসহায় মানুষের হাতে ঈদের নতুন পোশাক তুলে দিচ্ছেন  ডিআইইউসিওসি’র সদস্যরা
অসহায় মানুষের হাতে ঈদের নতুন পোশাক তুলে দিচ্ছেন ডিআইইউসিওসি’র সদস্যরা  © টিডিসি ফটো

‘পেটের ভাতই জোটে না; আমাদের আবার ঈদ আনন্দ, নতুন পোশাক।’ মলিন মুখে এক বাক্যের এ বক্তব্যটি আকবর হোসেনের। ঢাকার রিক্সা চালক তিনি। মধ্যবয়সী এ মানুষটার জীবনটাও সংগ্রামের। ঈদের আনন্দে মানুষ যখন চারদিকে হৈ হুল্লোড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে, আকবরের পা হয়তো তখনও ঘুরবে প্যাডেলের তালে তালে।

আলাপকালে বোঝা গেল, ঈদ এক ধরণের কষ্ট নিয়ে আসে আকবরদের জীবনে। কারণ ঈদে তিনি সন্তানদের তেমন কিছুই দিতে পারেন না ৷ অথচ চাঁদ রাত পর্যন্ত বয়ে বেড়ান যাত্রীদের সঙ্গে থাকা হাজার টাকা দামের সব পোশাক। মেগাসিটির আলো ঝলমলে দোকানপাট দেখলেও সেখান থেকে কিছু কেনা বা ঢোকার সাধ্য পর্যন্ত তার নেই।

আকবর বললেন, ঈদে ছেলে-মেয়েদের জন্য জামা কেনাই কষ্টকর হয়ে যায়; নিজের জন্য কিনব কীভাবে? ইচ্ছা করে নিজের জন্য একটা নতুন কাপড় কিনি; কিন্তু টাকায় কুলায় না।’

সত্যি বলতে কী, যেই দেশে পত্রিকার পাতা উল্টালেই ‘সম্প্রীতি, সাম্য এবং ঔদার্যের ঈদ’ শিরোনামের খবর চোখে পড়ে। টিভির রিমোট চাপলেই স্ক্রিনে ভেসে উঠে- হাজার টাকার পোশাকে মোড়াকে আবাল-বৃদ্ধা-বণিতাদের ছবি; সেই দেশে ‘খালি’ উপাধি পাওয়া আকবরদের খোঁজ কে রাখে?

আকবরের বক্তব্যেও এর সত্যতা মিলেছে। বললেন, ‘৩ বছর পর নতুন শার্ট পড়ব। মনটা খুশিতে ভরে গেছে।’ আকবরের এই নতুন পোশাক পরার কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ক্লাব’র (ডিআইইউসিওসি) এগিয়ে আসা। ঈদকে সামনে রেখে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটাতেই ক্লাবটির ভিন্নধর্মী এই উদ্যোগ। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নতুন এবং অতিরিক্ত কাপড় সংগ্রহ করে সেটাই তারা সুবিধাবঞ্চিত মানুষেদের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর সোবাহানবাগ এলাকায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে এই পোশাক বিতরণ করেন ক্লাবের সদস্যরা। তারা জানান, ঈদ মানে তো আনন্দ, খুশি। যদিও ঈদের এই খুশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের কাছে অধরাই থেকে যায়। ঈদ যেন তাদের কাছে অন্য পাঁচটি দিনের মতোই। মূলত দারিদ্রতার কাছেই ম্লান হয়ে যায় তাদের ঈদের খুশি। সেটা গুটিকয়েক লোকের জন্যও যদি কাটানো হয়, সে কারণেই তারা এই উদ্যোগ বেছে নিয়েছেন।’

নতুন পোশাক হাতে নিয়ে কাশেম মিয়া বলেন, ভিক্ষা করে পেট চলে। দু’চোখে দেখতে পাই না। আলো-অন্ধকার সবই সমান মনে হয় আমার কাছে। নতুন কাপড় পেয়ে আমার খুব ভাল লাগছে। আল্লাহ উনাদের ভাল করুক।

 

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা এবং মানবিক বিভাগের ডিন প্রফেসর হামিদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগে আমরা গর্বিত। এমন কাজে  সমাজের অন্যদেরও এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

কমিউনিকেশন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম কৌশিক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি থেকে যখন আমরা হতে পারবো তখনই ঈদের খুশি সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে। তাদের এমন কাজে সমাজের বিত্তবানরা অনুপ্রাণিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা তার।


সর্বশেষ সংবাদ