এবার মেঘনার পানিতে বিলীনের শঙ্কা বালুয়ার ‘বাতিঘর’

অনিশ্চয়তার মুখে ৪৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীর পড়াশোনা

মেঘনার তীব্র ভাঙ্গনের ফলে বিলীন হচ্ছে একের পর ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও খেলার মাঠ। অব্যাহত এই ভাঙ্গনের ফলে এবার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বালুয়ারচর সোনালীগ্রামে অবস্থিত ‘বালুয়ার বাতিঘর’ হিসেবে খ্যাত চর বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৪৫০ জন শিশু শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত এই বিদ্যায়টি ভাঙ্গনের শিকার হলে অনিশ্চিত হয়ে পড়বে তাদের শিক্ষাজীবন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীভাঙ্গনের ফলে মানুষের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বিলিনের শঙ্কায় তারা অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। যে যেভাবে পারছেন নিজেদের ঘরবাড়ি ও সহায়-সম্পত্তি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। নদী ভাঙ্গনের ফলে এখন বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে নদীর দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। অর্থাৎ নদীর এই দ্রুতগতির এই ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় বিদ্যালয়টি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.মফিজুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৪৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। যদি নদী ভাঙ্গনের ফলে বিদ্যালয়টি বিলীন হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং আমি আশংকা করছি কারো কারো শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটবে। তাই আমরা প্রশাসন এবং সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি নদীভাঙ্গন রোধের মাধ্যমে তারা যেন আমাদের বিদ্যালয় রক্ষায় দ্রুত এবং তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, না হয় বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

অন্যদিকে চর বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অবিভাবক নুরুল আলম বলেন, আমার দু’জন ছেলেমেয়ে বালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে আমাদের ঘরবাড়ির পর এবার স্কুলটি বিলীন হওয়ার পথে। যদি স্কুলটি বিলীন হয়ে যায় তবে আমার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ ছেলেমেয়েদের অন্যত্র নিয়ে পড়াশোনা করানোর সুযোগ এবং সামর্থ আমার নেই। তাই আমি একজন অবিভাবক হিসেবে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, সরকার যেন বিদ্যালয় এবং আমাদের সোনালীগ্রাম রক্ষায় নদীভাঙ্গন বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড লক্ষ্মীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন,রামগতি-কমলনগর পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাঙ্গন রোধে প্রকল্প গ্রহণ করে তা মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় যাচাই-বাছাই করছে এবং এরপরই একনেকে অনুমোদনের পর তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।

তিনি আরও জানান, তারা বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলে চেষ্টা করছেন ভাঙ্গন রোধে কিন্তু ৩১ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কোনো ব্যাবস্থা নেই। তবে প্রকল্প অনুমোদিত হলেই কাজ শুরু করার কথা জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা।

সম্প্রতি চরাঞ্চলের বাতিঘর নামে পরিচিত মাদারীপুরের শিবচরের বন্দরখোলা এলাকার এসইএস ডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। ২০০৯ সালে এ বিদ্যালয়ে যখন পাঠদান শুরু হয়, তখন পদ্মা নদীর সীমানা ছিল প্রায় চার কিলোমিটার দূরে। ২০১২ সালে বিদ্যালয় ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। এ বিদ্যালয়ে ২৪টি গ্রামের প্রায় ৩০০ ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করত।


সর্বশেষ সংবাদ