পদোন্নতি ও বেতন বঞ্চনা নিরসনে খোলা চিঠি প্রাথমিক শিক্ষকের

  © সংগৃহীত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি ও বেতন জটিলতা নিরসনে খোলা চিঠি লিখেছেন এক প্রাথমিক শিক্ষক নেতা। আজ বৃহস্পতিবার (৬ আগষ্ট) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে লেখা ওই চিঠিতে দ্রুত সমস্যার সমাধানের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতা টি এম জাকির হোসেন।

সহকারী শিক্ষক হতে প্রধান শিক্ষকে পদোন্নতির পর ক্রসপেন্ডিং এর আবেদন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি চিঠিতে বলেছেন, ‘চাকরির ২০ বছর পাড়ি দিয়ে ২১ বছরে চলছি। প্রায় দুই যুগের কাছাকাছি চাকরিকালে অনেক সচিব ও মহাপরিচালক দুর্দান্ত দাপটে কাটিয়ে গেলেও মনে পড়ে আবু হেনা মোস্তফা স্যারের কথা, যিনি সরাসরি শিক্ষকদের কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। এরপর আপনি যে সত্যি সত্যিই একজন বাবার মতো দরদী অভিভাবক হয়ে আপনার দপ্তরের দায়িত্বকে ভালোবেসে শিক্ষকদের বহুদিনের জরাজীর্ণ সমস্যা গুলো সমাধান করেছেন, করছেন এবং শনাক্ত করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের পরিচয় দেওয়ার মতো মর্যদার অবস্থানে দাঁড় করিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই, তবে আপনার প্রতি ভালোবাসায় কৃতজ্ঞতার প্রতিদান হিসেবে চোখের কিছু অশ্রু বয়ে পড়ছে। স্যার জানিনা কতটা ভালোবাসায় আবেগে আপ্লূত হলে চোখে জল আসে! আপনার একান্ত আন্তরিকতার কারণেই আমরা শতভাগ প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আপনার একান্ত অনুগত শিক্ষকেরা পদোন্নতি পেলেও তাদের গ্রেডের পরিবর্তন হয়ে ফিক্সেশনে বেতনের কোন বাড়তি সুবিধা হয় না। ক্রসপেন্ডিং করা হয় না বিগত ১৫-২০ বছরের দক্ষতা সনদের।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘চাকরি বিধি মোতাবেক নতুন পদে পদোন্নতি পেলে সেদিন থেকেই নতুন করে আবার চাকরি সময়কাল গণনা করা হয়। এটি যেন চলার পথে দম নিয়ে পথের শেষে এসে ভিন্ন রাস্তায় উঠা। লক্ষ্য এক হলেও পথ ভিন্ন।

এসময় সচিবের নিকট বিনীত নিবেন জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যেখানে সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক উভয়ের একই কাজ, তা হলো শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা প্রদান করা। আর আমরা যখন ১৫ - ২০ বছরের শিক্ষা প্রদানে অতি দক্ষ হয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেলাম, ঠিক তখন ডিপার্টমেন্ট বলছে, আপনি নতুন করে চাকরি শুরু করলেন। শুরু থেকে দুই যুগ পর্যন্ত দক্ষতা অর্জন এক নিমিষেই জিরোতে আসল। এটা শিক্ষকদের প্রতি মহা অমানবিক স্যার!’

তিনি বলেন, ‘সকল প্রধান শিক্ষক সরাসরি নিয়োগ পেয়েছে তারা মামলা করে ঠিকই ক্রসপেন্ডিং হিসেব নিয়েছেন। যেখানে ৩৫% প্রধান শিক্ষক এমন সুবিধা নিয়ে ফিক্সেশন করে অনেকই ৮ম গ্রেডে বেতন নিচ্ছে। বেতন পাচ্ছে ৫০ হাজার টাকা। একই সারিতে বসে ৬৫% প্রধান শিক্ষক, এখন হতে যাচ্ছে ১০০% প্রধান শিক্ষক, তারা স্বীকার হচ্ছে এই বঞ্চনার।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা, মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে এমন হাজার হাজার বুক ফাটা আর্তনাদ, আর্তচিৎকারে কেউই কান পেতে শ্রবণ করেনি। আপনিই যখন একমাত্র ভরসা হয়ে শিক্ষকদের হৃদয়ে আস্থার আসনে বসলেন ঠিক তখন বেজে উঠল সরে দাঁড়াবার ঘন্টা । আমি ও আমরা বিশ্বাস করি, এই অল্প সময়েই আপনি এমন এক অমানবিক বৈষম্যের অবসানে আপনার স্বহস্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কামনা করছি ও আশাবাদী হচ্ছি সুসংবাদ একটা পাবোই পাবো।

এই শিক্ষক নেতা আরও লিখেছেন, ‘আমিও সকল শিক্ষকের পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি মানসম্মত শিক্ষাদানে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষক নেতারাও মুখবুজে হাত গুটিয়ে বসে থাকব না। আমরাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিব মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা। যেহেতু প্রাথমিক শিক্ষায় সকল শিক্ষার বুনিয়াদ, সেহেতু প্রাথমিক শিক্ষককে অসন্তোষ রেখে তাদের কাছে আন্তরিকতা পুরোপুরি আশা করা যায় না।’ এজন্য বিষয়টি সদয় বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ