আগের চাকরি ছেড়ে বেকার প্রাথমিকের নিয়োগ প্রত্যাশারী

  © টিডিসি ফটো

আদালতে মামলা দায়ের করায় দেশের ৩৮ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। ঠাকুরগাঁও এবং লক্ষ্মীপুর জেলার নিয়োগে কোটা অনুসরণ না করায় নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ কারণে মোট ৪০ জেলায় এ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার সহকারী সচিব এস এম রকিবুল ইসলাম বলেন, নিয়োগে কোটা অনুসরণ হয়নি অভিযোগে ৪০ জেলায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে এসব জেলায় নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশের একটি জেলায় একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ কারণে হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নেয়া হলেও সেখানে একাধিক মামলা থাকায় নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। তবে গতকাল (১৭ ফেব্রুয়ারি) কয়েকটি জেলায় ছয়টি মামলা স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত হওয়ায় হতাশা ভুগছেন প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষকরা। তারা বলছেন, যেকোন নিয়োগের বিরুদ্ধে রীট করার অধিকার সাধারণ মানুষের থাকলেও সচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্থ করে এমন অহেতুক খামখেয়ালি রীটের বিরুদ্ধে তাদের আপত্তি রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিকের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভের আসার ব্যক্তিগত পূর্বের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন তাদের অনেকে। চাকরি ছেড়ে এখন বেকার জীবন কাটাচ্ছেন প্রাথমিকের এসব শিক্ষকেরা। এ বিষয়ে হতাশায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলাচিঠি লিখেছেন নিয়োগ বঞ্চিত প্রাথমিকের এক শিক্ষক।

বরাবর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
বিষয়: স্থগিত জেলাসমূহের দ্রুত পদায়নের আবেদন।

জনাব,
সবিনয় বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা সদ্য উত্তীর্ণ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮’র পদায়নের দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে থাকা নিয়োগ বঞ্চিত অসংখ্য শিক্ষকবৃন্দ। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে ১৮১৪৭ জন প্রার্থী প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হই। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে আমাদের ৬১ জেলার মোট ১৮১৪৭ জন শিক্ষকদের একসাথে যোগদানের এবং পদায়নের কথা থাকলেও মাত্র ২১ জেলার শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়েছেন বাকি ৪০ জেলার হাজার হাজার নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া শিক্ষকরা নিয়োগ পায়নি।

কেন যথাসময়ে নিয়োগ পায়নি সেটার কারণ হয়তো আপনার অজানা নয়। যেকোনো নিয়োগের বিরুদ্ধে রীট করার অধিকার হয়তো সাধারণ মানুষকে আদালত দিয়েছে কিন্তু অহেতুক রীট ব্যবসায়ীদের প্রবঞ্চনায় পড়ে কিংবা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কেউ রীট করলে তার জন্য হাজার হাজার চাকরি পাওয়া শিক্ষকগুলো অনিশ্চয়তায় দিন কাটাবে?

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের আশায় আমার মতো বেশিরভাগ শিক্ষকগুলো পূর্বের চাকরি ছেড়ে বেকার নামে বিষ ফোঁড়া বয়ে নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। একসাথে নিয়োগের জন্য মনোনীত হয়ে ২১ জেলার শিক্ষক আজ সরকারি চাকরিজীবী আর আমার মতো ৪০ জেলার শিক্ষকগন আজ ‘শিক্ষক পদপ্রার্থী’ পোস্টার হয়ে অজানা শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে।

কোন ফলাফল কিংবা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ত্রুটি পেলে হয়তো নিয়োগ বঞ্চিতদের রীট করার অধিকার রয়েছে। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ নিয়োগ প্রার্থীদের নিয়োগে বিলম্ব এবং বাধা প্রদানের কোন অধিকার তাদের নেই। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বাঁধাগ্রস্ত অহেতুক খামখেয়ালি রীট আদালত গ্রহণ করে কিভাবে সেটা নিয়েও অসংখ্য প্রশ্ন আমাদের মনে জেগে উঠেছে।

রীটকারীদের মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক জেলায় রীট করেছে। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের দাবি, বুয়েটের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাহায্যে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সকল কোটা অনুসরণ করেই নিয়োগ দিয়েছে। অধিদপ্তর ইতঃপূর্বে তাদের কোটা অনুসরণ করে নিয়োগের ব্যাখ্যা তাদের ওয়েবসাইটে দিয়েছে। অহেতুক খামখেয়ালি রীট গ্রহণ করে আমাদের সরকারি চাকরি পাওয়ার পরেও বেকার বানিয়ে রাখার অধিকার আদালতের আছে কী?

অতএব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের আকুল আবেদন, ৪০টি স্থগিত জেলার চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ নিয়োগ বঞ্চিত হাজার হাজার শিক্ষকদের অনতিবিলম্বে নিয়োগদানে আদালতকে তাগিদ দিতে জোরালো অনুরোধ জানাচ্ছি।

নিবেদক
নিয়োগ বঞ্চিত শিক্ষকবৃন্দ


সর্বশেষ সংবাদ