বেতন গ্রেড নিয়ে হিসাব মিলছে না প্রাথমিক শিক্ষকদের

  © ফাইল ফটো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০তম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেড করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষকরা। তারা অবিলম্বে বৈষম্য নিরসনসহ বেশকিছু দাবি আসছেন। শিক্ষকদের দাবির মুখে সরকারও বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস দেয়।

সে অনুযায়ী, সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেডে (১১০০০-২৬৫৯০) উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সহকারী শিক্ষক পদের বেতনস্কেলে এ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে তাদের ১১তম গ্রেডের যে দাবি ছিলো তা পূরণ হয়নি।

এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের বিষয়টি নিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন,  প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের বিষয়টি কিছুটা আইনী জটিলতায় আটকে আছে। তবে এ গ্রেড দেয়ার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সে মোতাবেক এবং দাবি অনুযায়ী, ১০ম গ্রেড না দেয়া হলে তারা মানবেন না বলে জানিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষকরা শতভাগ পদোন্নতিও পান না। সেজন্য ১০ম গ্রেডের সঙ্গে শতভাগ পদোন্নতিও চান তারা। শিগগিরই এসব দাবি না মানা হলে আন্দোলনে নামারও ইঙ্গিত দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র মো. বদরুল আলম মুকুল। ‘মুজিববর্ষে’ তাদের দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

১৩তম গ্রেডের বেতন কবে—যা বললেন প্রতিমন্ত্রী (ভিডিও)

তবে সম্প্রতি গোপালগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেয়া হবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের দুটি ধাপে বেতন বাড়ানো হয়েছে। শিগগিরই প্রধান শিক্ষকদের আরও এক ধাপ গ্রেড উন্নীত করা হবে বলে বলে তিনি জানান।

গত বছর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডসহ গেজেটেড পদমর্যাদা দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন উভয় শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড পদমর্যাদা ২০১৪ সালের ৯ মার্চ থেকে কার্যকর করতে বলা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।

জানা গেছে, বর্তমানে প্রধান শিক্ষক পদটি দ্বিতীয় শ্রেণীর হলেও ১১ ও ১২তম গ্রেডে বেতন পান। অথচ দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্য চাকরিজীবীরা পান দশম গ্রেডে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেও পরে প্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১ ও অপ্রশিক্ষিত প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র মো. বদরুল আলম মুকুল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা ১০ম গ্রেড দেয়ার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছি। আদালতের আদেশও রয়েছে। কিন্তু তা মানা হয়নি। ১০ম গ্রেড না দেয়া হলে আমাদের সামনে ফের আন্দোলনে নামার বিকল্প থাকবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড, কোনটিই পূরণ হয়নি। শতভাগ পদোন্নতিও দেয়া হচ্ছে না। ফলে অসেন্তাষ রয়েছে। আমরা এ নিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। পাশাপাশি শিগগিরই ঐক্য পরিষদের নেতারা বসে করণীয় ঠিক করব।’ এ সমস্যার সমাধান না হলে আন্দোলনেই সমাধান খোঁজা হেবে বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়লেও এতে যে শর্তারোপ করা হয়েছে, তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারণ শর্ত পূরণ করতে গেলে সব শিক্ষক নতুন বেতন স্কেল পাবেন না। এতে অনেকের মধ্যে সংশয়ও তৈরি হয়েছে বলে গেছে। তাদের দাবি নতুন যে বেতন স্কেল দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে, তা সব সহকারী শিক্ষককে দিতে হবে।

দীর্ঘদিনের দাবি না মানা এবং নতুন ১৩তম গ্রেডে সুবিধা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জানা গেছে, এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের নেতাদের যোগাযোগ হয়েছে। পাশাপাশি শিগগিরই তারা বৈঠকে বসে করণীয় ঠিক করবেন। এমনকি আন্দোলনে নামার বিষয়ে চিন্তাভাবনার কথাও জানিয়েছেন তারা। তবে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ইস্যুটির কারণে তারা কিছুটা সময় নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। যে গ্রেড দেয়া হয়েছে তার সুবিধা সবাইকেই দিতে হবে। কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।’ এজন্য শর্ত শিথিল করার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

পূর্বের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ১১তম গ্রেডের বিষয়ে যে দাবি জানিয়েছিলাম, তা থেকে সরছি না। তবে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড নিয়ে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। আমরা শিগগিরই ঐক্য পরিষদের সভায় বসে এ ব্যাপারে করণীয় ঠিক করবো।’ 

আরো পড়ুন:শিগগিরই ১১তম গ্রেড: প্রতিমন্ত্রী (ভিডিও)

সহকারী শিক্ষকদের ১৩ম গ্রেডে উন্নীত করণে প্রজ্ঞাপনের শর্তানুযায়ী, সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগের বয়সসীমা ২১ থেকে ৩০ বছর হতে হবে। এছাড়া কোন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা সমমানের ডিগ্রী থাকতে হবে। অবশ্য যারা এ সুবিধা পাবেন না সেজন্য তাদের নিজেরাই দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে থেকে যারা দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক ডিগ্রি না নিয়ে এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাস করে যোগদান করেছেন তারা নতুন সুবিধা পাবেন না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরণের ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। আর নতুন করে তাদের স্নাতক ডিগ্রী গ্রহণেরও সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সবার সুবিধার জন্য শর্ত কিছুটা শিথিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এ শর্ত অনুযায়ী অনেকেই সুবিধা পাবেন না। এটা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে। কারণ অনেক শিক্ষক যারা আগের শর্ত মোতাবেক যোগদান করেছেন, তাদের নতুন করে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ নেই।’


সর্বশেষ সংবাদ