প্রাথমিকে নিয়োগে নারী কোটা নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিল মন্ত্রণালয়

  © ফাইল ফটো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। নারী কোটার নিয়ম না মানায় নিয়োগ প্রক্রিয়া গড়িয়েছে আদালতে। দেশের ৬১ জেলার মধ্যে ৫৫ জেলাতেই নারী কোটা পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কোটা পূরণ হয়েছে মাত্র ছয়টি জেলায়। বিষয়টি আদালতে গড়ানোয় নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘নারী শিক্ষক কম নির্বাচিত হলেও বিধিমালার ব্যত্যয় হয়নি। এর কারণে হিসেবে ঐ সব জেলায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়নি বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নীতিমালায় বলা আছে, যোগ্য প্রার্থী না পেলে সাধারণ প্রার্থীদের দ্বারা পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে বলে দাবি তাদের।

এ সংক্রান্ত বিতর্কের বিষয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ব্যাখা দিয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহেল আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালার ৭(২) ধারা অনুযায়ী, ‘মহিলা, পোষ্য ও পুরুষ কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আপাততঃ বলবং অন্য কোন বিধি বা সরকারি সিদ্ধান্তে বিশেষ শ্রেণির কোটা নির্ধারিত থাকিলে সেই কোটা সংক্রান্ত বিধান অনুযায়ী নিয়োগ করিতে হইবে।’

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ বিধির কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ‘উপজেলা/থানা ভিত্তিতে শূন্যপদ অনুযায়ী কোন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধাক্রম অনুযায়ী একই উপজেলা বা কেন্দ্রমত থানায় উত্তীর্ণ সাধারণ প্রার্থীদের দ্বারা তা পূরণ করতে হবে।’ 

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি

এর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রিটের পর এখন করণীয় ঠিক করা হবে। রুলেরও জবাব দেওয়া হবে। যেসব উপজেলার ফল নিয়ে রিট হয়েছে, সেসব জেলার নিয়োগ ছাড়া অন্য কোথাও বাধা আছে বলে মনে করেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের জন্য এবার ১৮ হাজার ১৪৭ জন চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর মধ্যে নারী আট হাজার ৫৭০ জন যা মোট প্রার্থীর ৪৭ শতাংশ। আর পুরুষ প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন ৯ হাজার ৫৭৭ জন, উত্তীর্ণ প্রার্থীর ৫৩ শতাংশ।

অথচ ৬০ শতাংশ নারী কোটায় নিয়োগ পেলে এ সংখ্যা হতো ১০ হাজার ৮৮৮ জন। সে হিসাবে দুই হাজার ৩১৮ জন নারী কম নির্বাচিত হয়েছে। নারী কোটা পূরণ না হওয়ায় এরই মধ্যে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশনও দায়ের করা হয়েছে। নারী প্রার্থীদের অভিযোগ, তাদের বঞ্চিত করতে নীতিমালায় নতুন বাক্য যুক্ত করেছে।

এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে একাধিক। রিটের শুনানি নিয়ে চূড়ান্ত ফল কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না— জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নীলফামারী ও বরগুনার চূড়ান্ত ফলও ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেছেন আদালত।

গত বছরের ৩০ জুলাই প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে ২৪ লাখ প্রার্থী আবেদন করেন। চার ধাপের পরীক্ষার পর গত সেপ্টেম্বরে ফল প্রকাশ করা হয়। পাস করেন ৫৫ হাজার ২৯৫ জন পাশ করেন। পরে ১৮ হাজার ১৪৭ জন নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি তাদের যোগদান করার কথা রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ