১০ম ও ১১তম গ্রেড আন্দোলন: এবার ভাঙছে ঐক্য পরিষদ

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ নেতারা
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ নেতারা  © ফাইল ফটো

ভেঙে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ। মূলত প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষক ১১তম গ্রেড দাবিতে মোট ১৩ সংগঠন নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই সংগঠন। তবে দাবি-দাওয়া নিয়ে মতৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় সংগঠনটি থেকে বেরিয়ে আসছেন নেতারা। তারা বলছেন, পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতার দূরদর্শিতার অভাবে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম আদায় হয়নি। সেটাকে মাথায় রেখেই নতুন চিন্তা-ভাবনা করবেন তারা। আপাতত ঐক্য পরিষদে আস্থা রাখতে পারছেন না।

তথ্যমতে, চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর নতুন গ্রেড ও বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১৩টি সংগঠন নিয়ে ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’ গঠন করা হয়। সংগঠনগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (আতিক-কাশেম); বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি (সামছুদ্দিন-সাবেরা); বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ (আনিস-রবিউল); বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি(তোতা-গাজী); বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (আনসারী-আব্দুলাহ সরকার); বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি(মোঃবদরুল আলম); বাংলাদেশ গ্রেজুয়েট শিক্ষক সমিতি; পদোন্নতি প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমিতি; সহকারী শিক্ষক সমিতি (পুল); সহকারী প্যানেল শিক্ষক সমিতি; বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সহকারী শিক্ষক ফোরাম(আব্দুল হক-সিরাজ) এবং বাংলাদেশ সহকারী শিক্ষক ফ্রন্ট (ইউএস খালেদা-মোজাম্মেল হক)।

এদিকে ঐক্য ভাঙার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ঐক্য পরিষদ ভেঙে দিয়ে পরিষদের নামে পদ পদবি ব্যবহারসহ কোনো প্রকার কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সমিতির পক্ষ থেকে সহকারী শিক্ষকদের ১৩ তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড প্রত্যাখ্যান করছি। প্রধান শিক্ষকদের ১০ম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি আদায়ে আমরা স্বতন্ত্রভাবে মাঠে থাকবো। জেলা পর্যায়ের নেতাদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করেছি। তারা সবাই এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন।’

সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঐক্য পরিষদের নেতারা ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়বে কি কমবে সে নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন যা দেখে বোঝা যায় তারা ১৩তম গ্রেড একপ্রকার মেনে নিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি প্রধান শিক্ষকদের ১০ম এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতনের দাবি আদায়ে অনড়। তাই আমরাও করি সব থেকে বেরিয়ে এসে স্বতন্ত্র আন্দোলন করার বিষয়টি চিন্তা ভাবনা করছি। যদি অন্য কোনো সংগঠন চায় তাদের সাথে নিয়েই মাঠে থাকব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনোয়ারুল হক তোতা, আনিসুর রহমান আনিস ও শামসুদ্দিন মাসুদ দাবি আদায়ের কৌশলগুলো গণশিক্ষা সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সামনে ফাঁস করে দিয়েছেন। পরিষদের মূল নেতারা ২৩ অক্টোবরের মহাসমাবেশসহ দাবি আদায়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এখন ১৩তম গ্রেডের বেতন বাড়বে কি কমবে তা নিয়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। তাই সাত-আটটি সংগঠন ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।’

সহকারী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আব্দুল হক ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঐক্য পরিষদের নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে ১০ম ও ১৩তম গ্রেড প্রত্যাখ্যান করতে চায় না। ২-৩ জন নেতার কৌশলগত অপরিপক্কতার কারণেই ৪ লাখ শিক্ষক ১০ম ও ১১তম গ্রেড থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই ঐক্য পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আরও ৭-৮ সংগঠন একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

যদিও ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান আনিস পরিষদ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘নেতারা ঐক্য পরিষদকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু এখনো জানায়নি। শুধু আতিকুর রহমান আতিক প্রধান সমন্বয়কের পথ ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়েছেন। কোন সংগঠন ঐক্য পরিষদের সাথে থাকবে কি থাকবে না তা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।’

নেতাদের অভিযোগ, ঐক্যপরিষদের কয়েকজন নেতা ১৩তম গ্রেডের বেতন কম-বেশি হওয়া নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩তম গ্রেড প্রত্যাখ্যান করবেন না। ২-৩ জন নেতার কৌশলগত অপরিপক্কতার কারণেই ১০ম ও ১১তম গ্রেডের দাবি আদায় হয়নি। যদিও মোর্চা ভেঙে যাওয়া মেনে নিতে নারাজ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান আনিস। এদিকে যে ব্যানারেই হোক দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঠে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বর্ষিয়ান শিক্ষক নেতারা।

তথ্যমতে, দীর্ঘদিন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসন ও উন্নীত স্কেলে বেতন পাওয়ার দাবী করে আসছেন। বর্তমানে জাতীয় বেতন স্কেলের ১১ তম গ্রেডে একজন প্রধান শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির ঘোষণা করেন। সরকারের অন্যান্য দপ্তরের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা ১০ম গ্রেডে বেতন পান। কিন্তু প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১ তম গ্রেডে।

অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের পরের ধাপ অর্থাৎ ১১ তম গ্রেডে বেতন দাবি করছেন। বর্তমানে তারা বেতন পান ১৪ তম গ্রেডে। এই দাবি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সহকারী শিক্ষকরা আমরণ অনশণ করেছিলেন। ততৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী, সচিব ও ডিজি সেই অনশনে দাবি পূরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষকদের অনশন ভাঙ্গান। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় নি। পরবর্তীতে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার করা হয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের বার্তার মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস দেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।


সর্বশেষ সংবাদ