নতুন গ্রেড প্রত্যাখ্যান প্রাথমিক শিক্ষকদের

নতুন গ্রেডের বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা। প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের ১১তম, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ১২তম এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেড নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন জারি প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ‘প্রহসন’ উল্লেখ করে প্রত্যাখ্যান করছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তার কাছে তুলে ধরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দিন আজ বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গ্রেড পরিবর্তনের নামে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রহসনমূলক আচরণ করা হচ্ছে। যেখানে আমরা প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১০তম ও সহকারী প্রধানদের জন্য ১২তম গ্রেড মেনে নেইনি, সেখানে প্রধানদের ১১তম আর সহকারীদের ১৩তম গ্রেড মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। এ প্রস্তাব সব শিক্ষক প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

শিক্ষকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চেয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেড ও বেতন বৃ্দ্ধির বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছি। সমাপনী পরীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করব। তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে এ সমস্যা আর থাকবে না। তবে তা না হলে আমরা আলোচনা করে নতুনভাবে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো।’

নতুন গ্রেডে বেতন চালু হলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের সভাপতি আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন দিলে শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে। অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ বর্তমানে শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষক একাধিক টাইম স্কেল পেয়ে ইতোমধ্যে ১১তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। তাদের যদি আবার ১৩তম গ্রেডে নামিয়ে বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হয় তাহলে তো আমরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’

এসময় তিনি পরামর্শ দেন— ‘আমরা নতুন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি। সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক একই গ্রেডে অর্থাৎ ১১তম গ্রেডে রাখা যেতে পারে’। 

তথ্যমতে, প্রাথমিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এ দাবিতে আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাও বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন তারা। পরে বেতন বৈষম্য নিরসনে গত ২৮ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গত ৭ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। চিঠিতে এখন থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন) জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ১১তম গ্রেডে (১২৫০০-৩০২৩০ টাকা) এবং সহকারী শিক্ষক (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং প্রশিক্ষণবিহীন) ১৩তম গ্রেডে (১১০০০-২৬৫৯০ টাকা) বেতন পাবেন বলে উল্লেখ করা হয়।

বর্তমানে প্রশিক্ষণ পাওয়া প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকরা ১৫তম গ্রেডে বেতন পান। সহকারী প্রধান শিক্ষক নামে বর্তমানে কোনো পদ নেই।


সর্বশেষ সংবাদ