সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার আহবান সরকারের, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চান শিক্ষকরা

  © টিডিসি ফটো

আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে অনুষ্ঠেয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে সরে আসতে প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির। তবে দাবি মানা হলে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হলে ওই কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদিরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষক নেতারা। পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সঙ্গেও সাক্ষাত করেন তারা। সেখানে এসব দাবি তুলে ধরেন শিক্ষকরা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সভায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পাবলিক পরীক্ষা হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ করেন শিক্ষকদেরকে। এসময় শিক্ষকরা তাদের দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। বিশেষত প্রাধন শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড মেনে নেয়ার সুনির্দিষ্ট আশ্বাস চান।

পড়ুন: ডিজির কাছে বিচার দিতে গিয়েছিল কিছু শিক্ষক নেতা

জবাবে মহাপরিচালক এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে অবগত বলে জানান। এসময় শিক্ষক নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেন। তবে বিষয়টি তার এখতিয়ানে নেই জানিয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

পরে রাত ৯টার দিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা। সেখানে দাবি মেনে নেয়া, দুই হাজার ৭০০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে শো’কজ নোটিশ প্রত্যাহার এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত হলে তারা দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারবেন।

এসময় প্রতিমন্ত্রী তাদেরকে আশ্বাস্ত করে বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। তিনি এ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া এই দাবি বাস্তবায়ন করতে হলে পুরো অধিদপ্তরের সবার বেতন কাঠামো পরিবর্তন করতে হচ্ছে। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দেন তিনি।

এছাড়া সমাপনী পরীক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, পাবলিক পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে শিক্ষকদের বর্জনের কর্মসূচি থেকে সরে আসতে হবে। এসময় শিক্ষক নেতারা শোকজ নোটিশ প্রত্যাহারের দাবি জানালে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন প্রতিমন্ত্রী।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে আমরা সব দাবি জানিয়েছি। তারা দাবি মানার আশ্বাস দিয়ে সমাপনী পরীক্ষা নেয়ার অনুরোধ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছি।’

পরিষদের প্রধান মুখপাত্র মো. বদরুল আলম জানান, ‘ডি জি মহোদয়ের সাথে আলোচনা শেষ করে, প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন।প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বেতন কাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন।’

এর আগে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত ২৩ অক্টোবরের মহাসমাবেশে যোগ দেয়ায় প্রাথমিকের ২৭ শতাধিক শিক্ষককে শোকজ করা হয়। এর মধ্যে যশোরের দুই উপজেলায় ১৮শ’ এবং সাতক্ষীরার এক উপজেলায় ৯শ’ শিক্ষক আছেন বলে জানান বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম।

এছাড়া তাকে ও তার প্রতিষ্ঠান ঢাকার উত্তরার ফায়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন এবং কোতোয়ালি থানার ১৪ জনকে একইভাবে শোকজ করা হয়েছে। সূত্রাপুরের একজনকেও শোকজ করা হয়েছে।

এর আগে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা আপাতত ১০ম গ্রেড পাচ্ছেন না। তাদের ১১তম গ্রেডই দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। আর সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৩তম গ্রেড। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ উচ্চ পর্যায়ের পদগুলো আপগ্রেড হলে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়া হবে।

বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার প্রসঙ্গ তোলেন।

প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চেয়েছেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। জবাবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিষয়ক সচিব এর সর্বশেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘আপাতত প্রধান শিক্ষকদের ১১তম আর সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড দেওয়া হবে। আমরা নতুন নিয়োগ বিধির সুপারিশ করেছি। ওই নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন হলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারদের পদটি ৯ম গ্রেডে উন্নীত হবে। সেটা হলেই আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের স্কেল আপগ্রেড করে ১০ম গ্রেড করতে পারবো।’


সর্বশেষ সংবাদ