মহাসমাবেশে যোগ দেয়ায় ২৭শ’ শিক্ষককে শোকজ

সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত ২৩ অক্টোবরের মহাসমাবেশে যোগ দেয়ায় প্রাথমিকের ২৭ শতাধিক শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে যশোরের দুই উপজেলায় ১৮শ’ এবং সাতক্ষীরার এক উপজেলায় ৯শ’ শিক্ষক আছেন বলে জানান বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম। এছাড়া তাকে ও তার প্রতিষ্ঠান ঢাকার উত্তরার ফায়দাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০ জন এবং কোতোয়ালি থানার ১৪ জনকে একইভাবে শোকজ করা হয়েছে। সূত্রাপুরের একজনকেও শোকজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শোকজ করার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এটা চললে শিক্ষকরা ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে’ চলে যাবেন।

বদরুল আলম বলেন, ১৩ নভেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে ন্যূনতম আশ্বাস পাওয়া না গেলে সামনের সব পরীক্ষা বর্জন করা হবে। ছাত্রছাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষকদের গেজেটেড মর্যাদা দেয়ার অঙ্গীকার করার পরও তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এবার শিক্ষকরা দাবির বাস্তবায়ন চান।

এদিকে শিক্ষক আন্দোলনের কারণে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা। প্রধান শিক্ষকদের দশম ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবি পূরণ না করা হলে এ পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এর পরও দাবি আদায় না হলে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন এবং ক্লাসরুমে তালা লাগানোর হুমকিও দিয়েছেন শিক্ষকরা। এসব কারণেই পিইসি পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ১৭ নভেম্বর এ পরীক্ষা শুরু হয়ে ২৪ নভেম্বর শেষ হবে। এতে প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেবে।

তবে পরীক্ষা নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না বলে মনে করছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। দু-তিন দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনাও হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে শিগগিরই আলোচনা করবেন প্রতিমন্ত্রী। আশা করছি, বরফ গলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই শিক্ষকরা সর্বোচ্চ সুবিধা লাভ করুন। শিক্ষকদের দাবি পূরণ করতে বিদ্যমান বিধিমালার সংশোধন দরকার। সেটি সময়সাপেক্ষ। তাই এখন আপাতত সমাধানের একটি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। বিধিমালা তৈরি হয়ে গেলে তাদের পদসোপান করা হবে। তখন তারা ১০তম গ্রেড পাবেন। পাশাপাশি তারা পরিচালক পর্যন্ত হতে পারবেন। তাই এজন্য একটু সময় দিতে হবে।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জাতীয় বেতন স্কেলের এগারো ও ১২তম গ্রেডে বেতন পান। সহকারী শিক্ষকরা পান ১৪তম ও ১৫তম গ্রেডে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে বর্তমানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের দু’টির পরিবর্তে একটি (১১তম) গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের দুই ধাপ উন্নীত করে ১৩তম গ্রেডে বেতন দেয়ার বিষয়ে প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের সঙ্গে মৌখিক আলাপের ভিত্তিতে এটি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব। তিনি বলেন, এটা তাদের বেতন স্কেলের আপাতত সমাধান। নিয়োগবিধি সংশোধন হলে তাদের বর্তমান দাবি পূরণ হয়ে যাবে। তখন সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তারা নবম গ্রেডে বেতন পাবেন। দশম গ্রেডে প্রধান ও ১১তম গ্রেডে সহকারী শিক্ষকদের বেতন দেয়ার দাবিতে গত ১৪ অক্টোবর সারা দেশের প্রায় ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হয়। পরদিন দুই ঘণ্টা ও ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ১৭ অক্টোবর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি করেন তারা। এরপর ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করতে আসেন। কিন্তু পুলিশি বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। ওই অবস্থায় শিক্ষকরা পিইসি ও বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি দেন।

আন্দোলনকারী সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। মন্ত্রণালয় এখন ১১শ ও ১৩শ গ্রেড দেয়ার যে প্রস্তাবের কথা বলছে, সেটি শিক্ষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা, সহকারী শিক্ষকরা প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতনের গ্রেডে কোনো গ্যাপ চান না। এটি অনর্থক চেষ্টা হবে।

এ ব্যাপারে সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষকদের অনেক দাফতরিক কাজে স্কুলের বাইরে থাকতে হয়। তখন স্কুল পরিচালনার জন্য একজন ভারপ্রাপ্ত লাগে। সরকার সেই জায়গাটির জন্য একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করতে চায়। ইতিমধ্যে ৬৫ হাজার ৬২৬টি পদ সৃষ্টির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সম্মতি দিয়েছে। ১২তম গ্রেডে আমরা সহকারী প্রধান শিক্ষকদের রাখতে চাই। এজন্যই মাঝখানে একটি গ্রেড ফাঁকা থাকছে।


সর্বশেষ সংবাদ