দাবি না মানলে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা

  © টিডিসি ফটো

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড এবং সহাকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার এক দফা দাবি না মানলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা জুলিয়ে দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। দাবি মানার জন্য ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

বেতন বৈষম্য নিরসনে এক দফা দাবিতে আজ বুধবার ঢাকায় মহাসমাবেশ করার জন্য জড়ো হন তারা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। তবে পুলিশি বাধায় সেখানে সমাবেশ করতে না পেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় সমাবেশ করেন তারা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান মুখপাত্র মো. বদরুল আলম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শহীদ মিনারে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। ফলে দোয়েল চত্বরে সমাবেশ করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ১৩ নভেম্বরের মধ্যে দাবি না মানলে সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করা হবে। এরপরও দাবি না মানলে বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে না। তারপরও দাবি না মানলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘সমাবেশ অংশ নেয়ার জন্য সারাদেশ থেকেই শিক্ষকরা জড়ো হয়েছে। কিন্তু পুলিশ বাধা দিয়েছে, লাঠিচার্জ করেছে। পরে দোয়েল চত্বর থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে আজকের কর্মসূচি শেষ করা হয়েছে। তবে এখনো শিক্ষকরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আছেন।’ 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকদের মোট ১৪টি সংগঠন মিলে গঠিত হওয়া ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ’-এর ডাকে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। 

জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্বঘোষিত মহাসমাবেশ করার কথা ছিলো প্রাথমিক শিক্ষকদের। তবে পুলিশি বাধায় তা সম্ভব হয়নি। পরে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এলাকায় অবস্থান নেন।

সেখানে দাবি পূরণ করার জন্য আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। এরমেধ্যে বেতন বৈষম্যের নিরসন না করা হলে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা না করলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করার হুমকি দেন তারা।

আগামী ১৭ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এরমধ্যে দাবি পূরণ না হলে বার্ষিক পরীক্ষাও বর্জন করবেন। তারপর বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেবেন তারা। ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামসুদ্দিন মাসুদ নতুন কর্মসূচির কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দোয়েল চত্বরে পরিষদের আহবায়ক আনিসুর রহমান কর্মসূচি ঘোষণা করে আজকের কর্মসূচি শেষ করেন। তবে এই ঘোষণার পরেও অনেক শিক্ষক ওই এলাকায় এখনো বিক্ষিপ্তভাবে রয়ে গেছেন।’

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। তারা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’, ‘দাবি মোদের একটাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষক সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছেন। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কয়েকজন শিক্ষক অসুস্থ্যও হয়ে পড়েন।

দুপুরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে শিক্ষকদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এসময় শিক্ষকরা নানা ধরণের স্লোগান দেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা দোয়েল চত্বর ও শহীদ মিনার এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। কিছুদিন আগে তারা বিদ্যালয়ে কর্মবিরতিও পালন করেছেন।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ পাওয়া প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকরা ১৫তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।


সর্বশেষ সংবাদ