১১তম গ্রেড: আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষকদের সিদ্ধান্ত কাল

  © ফাইল ফটো

১১তম গ্রেডে বেতন ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এ দাবি মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। ফলে তারা আলোচনা করে আন্দোলনে নামার প্রস্ততি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দেশের সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের সবগুলো সংগঠন আগামীকাল বৈঠকে বসছেন। সেখানে বেতন বৈষম্য দূরীকরণসহ সব দাবি আদায়ে সমন্বিত আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেছেন, ‘আমরা সকল ভুল বোঝাবুঝির ও মতানৈক্যের অবসান ঘটিয়ে সমমনা সকল সংগঠনকে নিয়ে সহকারী শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী ১১তম গ্রেড আদায়ের দাবিকে বাস্তবায়নের জন্য যেকোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত। ২০ সেপ্টেম্বর, ৩টার বৈঠকে সকলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই।বৈধ-অবৈধের জাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেছেন, ‘কোন মুনাফিকের সাথে ঐক্য হবে না। শিক্ষকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। যারা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড আদায়ের শপথ নিয়ে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকবেন তাদের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন থাকবে।’

আগামীকালকের ঐক্যের মহাসড়ককে আরও প্রশস্ত ও সুগম করার স্বার্থে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনে আমাদের নৈতিক সমর্থন ও সহযোগিতা রইলো বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমরা সবগুলো সংগঠন মিলে কাল বৈঠকে বসেছি। সেখানে আলোচনা করে বৈষম্য নিরসন ও ১১তম গ্রেডসহ সব দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাদিয়া শারমিনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে বলা হয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বেতন গ্রেড যথাযথ ও সঠিক থাকায় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১০ ও সহকারী শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১২-তে উন্নীতকরণের সুযোগ নেই।

এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা গত ২৯ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে প্রধান শিক্ষকদের ১০তম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। তবে সহকারি শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠির সত্যতা নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিলেও পরে তা সত্য বলে নিশ্চিত হয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। এ নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখানোর পাশাপাশি আন্দোলনে নামার প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।

বর্তমানে দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদ রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে পাঠদানের কাজ করেন সহকারী শিক্ষকেরা। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকেরা বেতন পাচ্ছেন দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা স্কেলে। (কোর্টের রায় অনুসারে যেহেতু বকেয়াও পাবেন)। এছাড়া সহকারী শিক্ষকেরা বেতন পান ১৪তম গ্রেডে ১০ হাজার ২০০ টাকা স্কেলে।

অবশ্য গণমাধ্যমে খবর বের হয়, সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেড আর আর প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়ার প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ প্রস্তাব দিয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এটি বাস্তবায়ন হলে তা মানবেন না বলে ইতোমধ্যেই হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সহকারী শিক্ষকরা। এরইমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ চিঠির বিষয়টি সামনে আসলো।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছিল, ‘শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধিসহ সরকারের নানা কল্যাণমূখী ও যুগোপযোগী উদ্যোগ সত্ত্বেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষাখাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য এখনও রয়ে গেছে, আগামী মেয়াদে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ১১তম গ্রেডসহ বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তারা যখন আন্দোলন করছিলেন তখন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এসব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। সর্বশেষ নির্বাচনী ইশতেহারেও তাদের দাবি পূরণের বিষয়টি যোগ করা হয়। কিন্তু এখনো সে দাবি মানা হয়নি।

গত ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে দিতে আদেশ প্রদান করেন। এর আগে সরকারের পরিকল্পনা ছিল প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ঠিক রেখে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১২তমতে উন্নীত করা। প্রধান শিক্ষকরা দশম গ্রেড পাওয়ায় সহকারী শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড দেওয়ার দাবি করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ