ছাত্রীকে অর্ধনগ্ন করে ছবি তুললেন প্রধান শিক্ষক

কুলাউড়া উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে নির্যাতন ও অর্ধনগ্ন করে ছবি তোলার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ওই শিক্ষক ছাত্রীর আপত্তিকর ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মেয়েটির বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলী ওই ছাত্রীকে অফিস কক্ষে ডেকে নেন। এ সময় তিনি ও তার ছেলে জাকারিয়া (১৫) মিলে মেয়েটিকে অর্ধনগ্ন করে কয়েকটি ছবি তোলেন। ছবি তুলতে আপত্তি জানালে তাকে হত্যা হুমকি দেন তারা। ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়ারও হুমকি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, পরীক্ষার ফি দিতে দেরি হওয়ায় গত ২০ জুলাই প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলী ওই ছাত্রীকে বেত দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান। এতে ছাত্রীর পিঠে ও হাতের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যায়। মারধরের পর ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কুলাউড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় বিদ্যালয়ে থাকা ছাত্রীর ফুফু আমেনা আক্তার প্রতিবাদ করলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনায় ওই দিন বিকেলে ছাত্রীর বাবা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ২৭ জুলাই বিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৌরভ গোস্বামী। ওই ঘটনার জেরে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে। মূলত সেই ক্ষোভ মেটাতেই ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।

ওই ছাত্রী বলে, 'স্যার ও উনার ছেলে মিলে আমার আপত্তিকর ছবি তুলেছেন। ছবি না উঠলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। কিছুদিন আগে পরীক্ষার ফি দিতে দেরি করায় স্যার আমাকে মারধর করেছিলেন।'

ছাত্রীর ফুফু আমেনা আক্তার জানান, জরুরি দরকার আছে বলে মেয়েটিকে অফিস কক্ষে ডেকে নেন প্রধান শিক্ষক। এ সময় শিক্ষক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে দরজা বন্ধ করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ছবি তুলেছেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মন্তাজ আলী বলেন, তিনি ছাত্রীকে মারধর করেননি। কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য ছবি তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। তাই ছবি তুলেছেন। একটি মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। শিক্ষা বিভাগ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি বলে তিনি দাবি করেন।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আইয়ুব উদ্দিন জানান, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় ওই শিক্ষককে অন্যত্র বদলির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বুধবারের ঘটনার তদন্ত করে রোববারের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও।


সর্বশেষ সংবাদ