নিজ উপজেলায় খাতা মূল্যায়নের সুযোগ বন্ধ হচ্ছে প্রাথমিকে

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী এবং ইবতেদায়ী মাদরাসারা সমাপনী পরীক্ষার খাতা নিজ উপজেলায় মূল্যায়ন করার সুযোগ বন্ধ হচ্ছে। এর পরিবর্তে পরীক্ষার্থীদের খাতা অন্য উপজেলার শিক্ষকদের নিকট মূল্যায়ন করতে পাঠানো হবে।

পরীক্ষায় দুর্নীতি রোধে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। চলতি বছর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। সম্প্রতি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়নের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) বদরুল হাসান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, খাতা মূল্যায়নে গত বছরের অভিজ্ঞতা সভায় তুলে ধরেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। অভিযোগের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

২৪ আগস্টের সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের অনেকেউত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। পরে ২০১৭ সালের নিয়মে এক উপজেলার খাতা অন্য উপজেলায় মূল্যায়নের প্রস্তাব দেন তারা। সবার সম্মতিতে চলতি বছর থেকে এ নিয়ম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়া মূল্যায়িত উত্তরপত্রের নম্বর মুদ্রণ করে টেবুলেশন শিট প্রস্তত করে সিল স্বাক্ষরসহ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জেলায় পাঠানো হবে। আগামী ১৭ নভেম্বর শুরু হচ্ছে চলতি বছরের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা, যা ২৪ নভেম্বর শেষ হবে।

পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ২৪ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা হয়। এতে পরীক্ষার সময়সূচি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ, নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা রক্ষা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, ফি নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, একশ্রেণির অভিভাবক এই দুটি পরীক্ষায় সন্তানের জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নিচ্ছেন। পরীক্ষার্থীদের খাতা নিজ উপজেলায় মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া তাদের জন্য সহায়ক হয়ে উঠেছে। খাতা মূল্যায়নকালে কোডিং পদ্ধতি ব্যবহার করলেও কৌশলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহায়তায় অভিভাবকরা সন্তানের খাতা পছন্দের বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিয়ে দেখিয়েছেন।

অভিযোগ উঠেছে, এভাবে যোগসাজশে খাতায় নম্বর বাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ফল ভালো করতে বরগুনার একটি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজ পরীক্ষার্থীদের খাতা নিজেরাই দেখেছেন।

এছাড়া গত বছরের সমাপনী পরীক্ষায় সন্তানের ফল ভালো করাতে খাতা মূল্যায়নে অনৈতিক পন্থার আশ্রয় নেওয়ায় এক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতেই চলতি বছর থেকে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

উত্তরপত্র মূল্যায়নে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের নির্দেশ দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। অবহেলা, দেরি বা অনিয়ম দেখা গেলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। অভিযুক্তদের নাম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে ডিপিই ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।


সর্বশেষ সংবাদ