বেতন কাঠামোর পৃথকীকরণ, বাড়াতে পারে প্রাথমিক শিক্ষার কাঙ্খিত উন্নয়ন

  © টিডিসি ফটো

শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। প্রাথমিক শিক্ষাকে এই মেরুদন্ডের প্রধান উপাদান বলে বিবেচনা করা হয়। ভিত্তি মজবুত না হলে যেমন ভবন মজবুত করা যায় না তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন না করে শিক্ষাকে জাতির মেরুদন্ড বলে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব না। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড - এই কথাটাকে প্রকৃতভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে জড়িত সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। সবার সাবলীল অংশগ্রহণ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা অসম্ভব বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত।

শিক্ষাকে কাঙ্খিত উন্নতির পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে এবং এটাকে সবার মাঝে সুন্দর ও সুচারুভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে মানসম্মত ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান, সৎ ও যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষক ছাড়া শিক্ষার প্রকৃত বিকাশ ঘটানো সম্ভব না। জানামতে অধিদপ্তর, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ), বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, পিটিআই, পিটিআই সংযুক্ত বিভিন্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৪ লাখেরও বেশী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষক এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে।

যার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আছে সহকারি শিক্ষক যা সংখ্যায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ, প্রধান শিক্ষক আছে প্রায় ৫০ হাজার, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকসহ আরো প্রায় ১০ হাজার মানুষ এই পেশায় কর্মরত আছে। কর্মরত অধিকাংশেরই তাদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান নিয়ে খুশি নয় ব্যতিক্রমও আছে। আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে, যদি কর্মরত সবার যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের প্রাপ্য সুযোগ সুবিধার সাথে অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে যে বৈষম্য আছে তা কমিয়ে আনা যায় তাহলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব তবে অনেকের ভিন্নমতও থাকতে পারে।

যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকদের আলাদা বেতন কাঠামো তৈরি করে সকল ধরনের বেতন বৈষম্য লাঘব করতে পারলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান কাঙ্খিত উন্নয়ন করা যেতে পারে। জানামতে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকদের ধারণা যে, তারা তাদের প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তারা আরো ভাবে অন্য ক্ষেত্রের চাকুরীজীবীরা যে ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়, তারা তা পায় না। এই ধরণের ধ্যান-ধারণা বা মনমানসিকতা মনের মধ্যে বিরাজমান থাকলে কোন মানুষই তার প্রকৃত মেধাকে সঠিকভাবে সঠিককাজে ব্যবহার করতে পারে না। আর এই কারণে সন্তানতূল্য শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়। যার কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা পিছিয়ে পড়ছে।

আমরা সবাই জানি কারোরই সকল চাওয়া পূরণ হয় না বা করা সম্ভব না। তবুও সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে তুলনা করে আর্থিক সমস্যা সমাধান করতে পারলে এই শিক্ষার অনেকাংশে উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। এই লেখার পর অনেকেই অনেক ধরনের বিরূপ মন্তব্য করতে পারে কিংবা আমার আদর্শ ও নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে কিন্তু অল্প কিছু দিন এই বিভাগে কাজ করতে এসে এবং এই শিক্ষায় জড়িত অনেক মানুষের সাথে মেলামেশা ও আলোচনা করে একথা বুঝতে পেরেছি যে, পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে সবাই ভাবে তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য সম্মান এবং সুবিধা পায় না। তাই সরকারের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি এবং তাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাই যে সকল পর্যায় থেকে যোগ্যতার মাপকাঠি বিবেচনা করে অন্যান্য সেক্টরের সাথে তুলনা করে আলাদা বেতন কাঠামো গঠন করে প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। সকল পর্যায় থেকে বেতন বৈষম্য দূর করা সহ এই বিভাগের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করতে পারলে প্রাথমিক শিক্ষাকে বিশ্ব দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব বলে আমিসহ অনেকেই ধারনা করে থাকি। প্রাথমিক শিক্ষা বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক এই কামনা করি।

তাই সরকারের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিনীত প্রার্থনা যে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে সকল বৈষম্য, অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করা এবং শিক্ষকদের পর্যাপ্ত মান মর্যাদা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশাকে যাতে আদর্শ পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সেই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া।

 

লেখক: প্রধান শিক্ষক (৩৬ তম বিসিএস নন-ক্যাডার) ১০১ নং পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিনাইদহ সদর, ঝিনাইদহ।