দেশের ১২% বিদ্যালয় নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করছে

  © সংগৃহীত

দেশের মাত্র ১২ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করছে । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে এমনটি বলা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানে গত কয়েক বছরে দেশের প্রায় ২৪ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মাল্টিমিডিয়া সুবিধার আওতায় এনেছে সরকার। কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার অভাবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই তা অব্যবহূত থাকছে বলেও পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণে একটি অ্যাপ তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা প্রদান করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচি। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করে শ্রেণীকক্ষের একটি ছবি জিপিএস কানেক্টিভিটিসহ এ অ্যাপে আপলোড করতে হয় শিক্ষকদের। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এটুআই।

অ্যাপের মাধ্যমে প্রাপ্ত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘সেমি-অ্যানুয়াল মনিটরিং রিপোর্ট’-এ। সেখানে দেখা যায়, দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়েই নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে না মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতির ক্লাসরুম।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে সারা দেশে ২৪ হাজার ৩৫২টি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ৩৪ হাজার ৬১৩টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু রয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ৪ হাজার ৪৩৯টি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ৭ হাজার ৭৯৫টি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে।

এছাড়া বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৮৫৯টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩ হাজার ৯৯৫টি, খুলনা বিভাগে ৩ হাজার ৭৪০টি, রাজশাহী বিভাগে ৪ হাজার ৩১টি, রংপুর বিভাগে ৩ হাজার ৫১৭টি, সিলেট বিভাগে ১ হাজার ৯৯টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৬৭২টি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু রয়েছে। দেশের ৫৮৭টি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় কোনো মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে মাত্র ১২ শতাংশ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত ব্যবহারের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগ। এ বিভাগের মাত্র ৭ দশমিক ১০ শতাংশ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত ব্যবহূত হচ্ছে। আর সবচেয়ে এগিয়ে আছে বরিশাল বিভাগ। বিভাগটির ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নিয়মিত ব্যবহার করা হচ্ছে।

এটুআইয়ের এডুকেশনাল ইনোভেশনের ন্যাশনাল কনসালট্যান্ট মেহেদী হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্যালয়গুলোয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার মনিটর করার জন্যই এ অ্যাপ তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে এমএমসি ব্যবহারের রিয়েল টাইম ডাটা পাওয়া সম্ভব। এমনকি সারা দেশে কতটি বিদ্যালয়ে কয়টি ক্লাস মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে নেয়া হয়েছে, কোন অঞ্চলে বেশি, কোন অঞ্চলে কম—সব তথ্য পাওয়া সম্ভব এ অ্যাপের মাধ্যমে। যেসব বিদ্যালয় প্রতিদিন ন্যূনতম দুটি ক্লাস মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে নিয়ে থাকে, সেসব বিদ্যালয়কে নিয়মিত ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, খুব কম প্রতিষ্ঠানই নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ক্লাস নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে এর ব্যবহার কীভাবে আরো বাড়ানো যায়, আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি। আসলে অ্যাপ চালু হয়েছে বেশিদিন হয়নি। ধীরে ধীরে এ হার আরো বাড়বে। নিয়মিত-অনিয়মিত সব আমলে নিলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করা বিদ্যালয়ের হার আরো বাড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপনের পাশাপাশি এর যন্ত্রপাতি ব্যবহার বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান খুবই জরুরি। পাশাপাশি এ পদ্ধতিতে পাঠদানের কন্টেন্ট বিষয়েও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যথায় বড় বরাদ্দের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন ঠিকই হবে, তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে।

এদিকে নিয়মিত ব্যবহার না হওয়ায় অনেকটা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের বিভিন্ন ডিভাইস। এর ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি স্থাপনের অল্প সময়ের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রশিক্ষণের অভাবে শিক্ষকরাও ঠিকমতো কম্পিউটার ও প্রজেক্টরগুলোর সঠিক ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন না। তাই সঠিক ব্যবহারের অভাবে এসব ডিভাইস নষ্ট হয়ে যায়।

ডিজিটাল কন্টেন্টের মাধ্যমে শিক্ষাদানের উদ্যোগ যাতে সফলভাবে পরিচালিত হয়, সেজন্য একাধিক সুপারিশ করেছে আইএমইডি। এর মধ্যে রয়েছে সরবরাহ করা ল্যাপটপ, প্রজেক্টর ও মডেম যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে রাজস্ব বাজেটের আওতায় পর্যাপ্ত তহবিল প্রদান। পরবর্তী সময়ে এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে মানসম্মত কম্পিউটার সরবরাহের ওপরও জোর দিয়েছে আইএমইডি।


সর্বশেষ সংবাদ