প্রাথমিকে নিয়োগ: স্বচ্ছতা আনতে কমিশন চায় মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসনের না

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বাধীন একটি সংস্থা গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনা ও জটিলতা কমাতে গত চার বছর নতুন কমিশনের প্রস্তাব দেন। এটি হলে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগে শতভাগ মেধার প্রতিফলন ঘটবে বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও এটি বাস্তবায়নে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাধা মুখে পড়তে হচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা নেই এমন মতামত দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, কমিশন করতে হলে আইনের পরিবর্তন করতে হবে, যা কঠিন কাজ। কিন্তু সরকার চাইলে সব সম্ভব, শুধু সদিচ্ছা দরকার- এই মনোবল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা।

সরকারি চাকরিতে সবেচেয়ে বেশি নিয়োগ হয় প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ। গত ৫ বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আরও ১৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে আবেদন পড়েছে ২৪ লাখের বেশি। প্রতি আসনের বিপরীতে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন ২০০ বেশি চাকরি প্রার্থী। এ বিশাল আবেদনকারীদের নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন অধিদপ্তর। শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা নিতে গিয়ে কয়েক দফায় সময় পিছিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। শেষ পর্যন্ত রমজান মাসে ২৪ মে থেকে চার ধাপের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিদর্শনকালে শিক্ষক নিয়োগে আলাদা একটি কমিশন গঠনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক নিয়োগের কাজটি দৈনন্দিন বিধায়, এটি জটিল বিষয়। আমাদের বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) হয়ে আসতে আসতে অনেক সময় লাগে। এ জন্য আমার একটা প্রস্তাব আছে। এ বিষয়ে কাজও হচ্ছে। আমি মনে করি, শিক্ষক নিয়োগে একটা আলাদা কমিশন হওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, কমিশন ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ বিদ্যমান সমস্যা সমাধান সম্ভব না। তাই কমিশনের বিষয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেকোন জটিলতা এড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশনার পরও ৪ বছর থেমে ছিল কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা আসার পর কমিশন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেন নতুন সচিব আকরাম-আল-হোসেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ে মাস্টার প্ল্যান করেন যেখানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন গঠনের বিষয়টিতে জোর দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্বয়ক বৈঠকে কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) পলিসি ও অপারেশন বিভাগকে নির্দেশ দেন। সেই প্রতিবেদন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আলোকে কমিশনের গঠনের মতামত চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের না সূচক জবাব দিয়ে বলেছে, আপাতত কমিশন গঠনের কোনো প্রয়োজনীতা নেই।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি সচিব হিসেবে আসার পর কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন। সে জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়ে চিঠি দেন। কিন্তু সেখান থেকে না সূচক জবাব আসে। কমিশন গঠনের কোনো সুযোগ নেই বলে তারা জবাব দিয়েছে। যেহেতু প্রধামন্ত্রীর নির্দেশনা দিয়েছেন তাই এটার পিছনে লেগে আছেন। প্রধানমন্ত্রী আবার প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের সফরে আসছেন। তখন বিষয়টি আবার তোলা হবে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ