মৃত্যু ঝুঁকিতে চলছে প্রাথমিকের শিক্ষা কার্যক্রম

উত্তর এওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
উত্তর এওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়  © সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ও পলেস্তারা উঠে গিয়ে পিলারের রড বেরিয়ে এসেছে। যার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় মৃদু ভূ-কম্পনেও ভবন ধসে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য অনেক তদবির করে কোন সুরাহা না হওয়ায় প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের।

সাতকানিয়া উপজেলার উত্তর এওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও শিক্ষকদের সাথে আলাপকালে জানা যায় উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের উত্তর এওচিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কের পার্শ্ববর্তী কাঞ্চনা জোটপুকুরিয়া বাজার ও শান্তিরটেক এলাকার মাঝামাঝি স্থানে খাঁন মোহাম্মদের বাড়ি এলাকায় অবস্থিত। ১৮৯২সালে সমাজ হিতৈষী মরহুম আবদুর রহমান বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি বিদ্যালয়ের নামে ২২ শতক জায়গা দান করে যান।

এরপর প্রথমে মাটির ভবন নির্মাণ করে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। বন্যার পানিতে ভবনটি ধসে পড়লে পরবর্তীতে সেমি পাকা টিনসেট দিয়ে একটি ভবন তৈরি করা হয়। সে ভবনটি অনেকদিন ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে শ্রেণি কক্ষ ও শিক্ষকদের অফিস হিসেবে। শিক্ষার্থী অনুপাতে শ্রেণীকক্ষের সংকট থাকায় অনেক গাদাগাদি ও কষ্টের মধ্য দিয়ে পার হয় বছরের পর বছর।

অনেক চেষ্টা তদবির করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ১৯৯৫ সালে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে দেন। নির্মাণে ত্রুটির কারণে ২৪ বছরের ব্যবধানে ভবনটি জরাজীর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপক ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভীর নজরে আসলে তিনি সাতকানিয়া উপজেলা ও পৌরসভার জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য ২৪টি বিদ্যালয়ের নাম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেন। এর মধ্যে এ বিদ্যালয়টির নামও জরাজীর্ণ ভবন হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

তবে সম্প্রতি বিদ্যালয়টি সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই দেখা যায়, হাতের বাম পাশের সেমিপাকা টিনসেটের একটি ভবন। সে ভবনে বসে ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। দরজা-জানালা ভাঙ্গা। ভবনের পিলার থেকে পলেস্তারা উঠে গিয়ে বের হয়ে গেছে লোহার রড। উপরে ফুটো হয়ে গেছে টিনের চালা। ভেঙ্গে গেছে টিনের চালার সাথে লাগোয়া গাছের বিমগুলো। মনে হচ্ছে এ মুহূর্তেই চালাটি ভেঙ্গে নিচে পরে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এ ভবনটি দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বে রয়েছে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ছাদ জমানো একটি পাকা ভবন। যেটি ১৯৯৫ সালে এলজিইডি নির্মাণ করেন। ভবনের ৩টি কক্ষের মধ্যে ২টি শ্রেণীকক্ষ ও ১টি শিক্ষকদের অফিস হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে।

ভবনের অফিস কক্ষটির ছাদের মাঝখানের পিলারটির অনেক অংশ ভেঙ্গে পলেস্তারা উঠে গিয়ে রড বের হয়ে গেছে। আরো কয়েকটি পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এর নিচেই ঝুঁকি নিয়ে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আসে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা। পিলারের আরো কয়েকটি পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কক্ষের চতুর্দিকের পিলার ও দেয়ালে দেখা দিয়েছে ফাটল। অফিসের পার্শ্ববর্তী কক্ষ ২টিরও একই অবস্থা। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে দেয়াল চুপসে ও পিলারের ভাঙ্গা অংশে পানি ঢুকে ভিজে যায় ভবনের তলা। শিক্ষকরা ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি শিক্ষক বা বোর্ডের দিকে নয়, তারা তাকিয়ে থাকে ওপরে, ভবনের ছাদে-এই বুঝি ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ল।

একই অবস্থা অফিস কক্ষে বসা প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদেরও। এভাবেই দিনের পর দিন আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মাঝে-মধ্যে ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে। তখন আতঙ্কে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে হুড়াহুড়ি পড়ে যায় বলে জানা গেছে।

পঞ্চম শ্রেণি ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসপ্রিয়া সোলতানা তুহিন বলেন, ক্লাস করার সময় ছাদের বালি-সিমেন্ট প্রায় সময় খসে পড়ে। এ কারণে বেশিরভাগ সময় পড়া ছেড়ে ছাদের দিকে থাকিয়ে থাকি।

অভিভাবক জুয়েল দত্ত বলেন, পার্শ্ববর্তী স্থানে স্কুল না থাকায় বাধ্য হয়ে সন্তানদের এ স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। অতি শীঘ্রই বিদ্যালয়টি সংস্কার ও নতুন ভবন যদি না হয়, তাহলে মৃত্যু ঝুঁকি থেকেই যাবে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল মজিদ জানান, এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত ভবনটির নির্মাণকাজে ত্রুটির কারণে ২৪বছরের ব্যবধানে ভবনটি মৃত্যু ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, ক্লাস নিতে এবং অফিসে বসেও ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, কখন পলেস্তারা খুলে মাথায় পড়বে তার নিশ্চয়তা নেই।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুক্তি রাণী ধর বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩শ। এখানে দুই শিফটে নেওয়া হয় ক্লাস। প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেয়া হয় ১৯৯৫সালে নির্মিত ভবনে। এ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ রয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস নেয়া হয় সেমি পাকা টিনসেটের ভবনে। এ ব্যাপারে এম.পি মহোদয় এ বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ে তালিকা প্রেরণ করেছেন। শ্রেণীকক্ষের সংকট থাকার পরও অনেক কষ্ট ও গাদাগাদি করে হলেও চলমান রাখতে হয় শ্রেণি কার্যক্রম। অন্যদিকে ৬জন শিক্ষকের স্থলে আমি সহ ৪জন শিক্ষক রয়েছি। ২জন শিক্ষকের পদ শূন্য।


সর্বশেষ সংবাদ