১১তম গ্রেড: সচিবের সঙ্গে বৈঠকে যা যা হয়েছে

শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ
শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ

১১তম গ্রেড নিয়ে সোমবার সচিব আকরাম-আল-হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। বৈঠকে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও তা নিয়ে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খোলাসা করেছেন বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তিনি ‘দয়া করে ধৈর্য ধরুন’ শিরোনামে লিখেছেন,  এতদিন আপনারা গেরিলা আলোচনার কথা শুনেছেন। ২০ মে কেন্দ্র করে গতকাল ওপেন আলোচনা হল।আমরা ১১ তম গ্রেডের বিষয়ে এক চুলও ছাড় দিব না এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ আমরা কখনোই চাই না। কেন চাই না তা আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে আমি, সাবেরা আপা এবং রাজেশ দা যুক্তিসহ তুলে ধরেছি। সচিব মহোদয় তা নোট করে নিয়েছেন। আনিস ভাই, ইউ এস খালেদা, ইলিয়াছ ভাই, শাহিনুর আপা, শাহিন ভাই, তপন দা’সহ সবাই বৈষম্যের বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন।

সচিব মহোদয়ের সাথে আলোচনায় আমি আমার বক্তব্যে ড. সেলিম মাহমুদ স্যারের সহযোগিতায় নির্বাচনী ইশতেহারে দাবি কীভাবে এসেছে তা বিস্তারিত তুলে ধরেছি এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন না হলে আমরা আন্দোলনের মাঠ ছাড়ব না তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি।

আমরা আরো বলেছি, ১০ বা ১৬ বছর পর ১১তম বা ১০ম গ্রেডের একজন সহকারী শিক্ষককে ১১ তম গ্রেডের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে একজন শিক্ষককে অপমান করা। রাজেশ দা তুলে ধরেছেন, ৩ থেকে ৪ জন সহকারী শিক্ষকের জন্য ২ জনকে প্রশাসনিক পদ দিলে তাতে উপকারের পরিবর্তে বিশৃঙ্খলাই বাড়বে। সাবেরা আপাসহ সবাই এই পদের বিরোধিতা করেছেন।

আমি সচিব মহোদয়কে স্পষ্টভাবে বলেছি ১১ তম গ্রেডের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন ঘোষণা না আসলে ২০ মে থেকে ঘোষিত আন্দোলন চালিয়ে যাবে সহকারী শিক্ষকরা। তখন সচিব মহোদয় আমাকে ট্যাগ করে বলেন, ‘আপনাদের ২০ মে এর আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই আজকের আলোচনা।’

‘আমি এই মন্ত্রণালয়ে আসার পর ৩ মাসের আপনাদের নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে সবার নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক পাশ করেছি। আপনারা এখন ১০ম গ্রেডের দাবিদার। আপনাদের দাবিতো ১১ তম গ্রেড। আমি অর্থ সচিবের সাথে আপনাদের বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং আবারও বসব। এমনকি আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপনাদের চাওয়াটাই যাতে কার্যকর হয় সেভাবেই তুলে ধরব। আমাকে একটু সময় তো দিতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি রোজা মুখে রেখে কথা দিচ্ছি আগামী মুজিব বর্ষ শুরুর আগেই আপনাদের সকল সমস্যা আমি সমাধান করব। গত ৪ এপ্রিল,২০১৯ খ্রি. এর নিয়োগবিধি আবারও সংশোধন করে আপনাদের সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি দিব। এরপর ১৯৮৫(১৯৯৫) এর নিয়োগবিধি পরিবর্তন করে এটিইও, টিইও, ডিপিইও সহ উর্ধতন সকল পদে শতভাগ পদোন্নতি দিব যাতে কখনো বেতন বৈষম্যের আর কোন সুযোগ না থাকে।’ নন-ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্ট এবং বিদ্যালয়ের সময় কমানোর বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন।

সর্বশেষ কথা হল, এতদিন সবাই জানত কী হচ্ছে। আমরা কয়েকটা সংগঠন ছাড়া বাকি সবাই কিন্তু চুপ ছিল। কেউ কেউ গোপন আলোচনার কথা তুলেছেন।

আমরা সবসময় প্রতিবাদ করেছি। ২০ মে এর অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেওয়ার পর আবারও আলোচনার পথ তৈরি হয়েছে। আমরা তো আন্দোলন প্রত্যাহার করিনি। সাময়িক স্থগিত করেছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের সামনে অনেক কিছুই করার সুযোগ আছে। সচিব মহোদয়ের সাথে আমাদের আলোচনা প্রায় ৫ ঘন্টা ব্যাপি হয়েছে। ৫ মিনিটের লাইভ দেখে সবকিছু বুঝা যাবে? ডিজি মহোদয়ও কিছু কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আপনাদের একটুও বঞ্চিত করবনা। কাজগুলো করার জন্য সময় দিতে হবে ‘

পরিশেষে বলি, অধিকার আদায়ে কখনো মাথা নত করিনি, গতকালও করিনি। ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ অভিভাবিকে অধিকার আদায়ের যুক্তিতর্কে একটুও ছাড় দেইনি। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিয়ে এসেছি ১১ তম গ্রেড এবং শতভাগ পদোন্নতির বিকল্প কিছু হলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না। তবে যেহেতু আলোচনার আরেকটা পথ তৈরি হয়েছে আমরা তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করব। প্লিজ, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করি আর দাবি আদায়ে একে অপরকে সহযোগিতা করি।

সচিব মহোদয় আমাদের অনেকেরই ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন। তিনি আমাদের সব কমেন্টই দেখেন। তাই এমন কোন কমেন্ট করবনা যাতে মহোদয় আমাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করেন।

অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই শ্রদ্ধেয় সচিব মহোদয়, ডিজি মহোদয়সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দের প্রতি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মানিত উপ-পরিচালক জনাব মাহবুব বিল্লাহ স্যারের প্রতি যাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় সকল সহকারী শিক্ষক সংগঠন এক টেবিলে আলোচনায় বসার সুযোগ পেয়েছেন। সকল শিক্ষক নেতৃবৃন্দের প্রতিও কৃতজ্ঞ। পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।’

১১তম গ্রেডে বেতন প্রদান ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করেন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকরা। এছাড়া গত ১৪ মার্চ দেশব্যাপী একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এরপরও দাবি আদায় না হওয়ায় ২০ মে ঢাকায় কর্মসূচি পালনের কথা ছিল। কিন্তু গতকালের আশ্বাসের পর সেই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না।

আরো পড়ুন:২০২০ সালে ১১তম গ্রেড, ২০ মে’র কর্মসূচি স্থগিত (ভিডিও)

ছাত্রলীগ নেতাদের বিয়ে, চাকরির দালিলিক প্রমাণ প্রকাশ্যে


সর্বশেষ সংবাদ