প্রচারের আড়ালে একজন জুয়েলের লড়ে যাওয়া

  © সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের শক্তিমান কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।’ কালজয়ী সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা গেয়েছিলেন, ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে, একটু সহানুভূতি কি, মানুষ পেতে পারে না; ও বন্ধু’।

সত্যিই মানুষ বড় অসহায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রকৃতির সকল বিষন্নতা ভর করেছে মানুষের মধ্যে। তবে এর মধ্যেও লড়ে যাচ্ছেন অনেক মানুষ। নিজ জীবনকে তুচ্ছ করে সহায়-সম্পদ আর শ্রম দিয়ে দাঁড়াচ্ছেন বিপন্ন মানুষের পাশেই।

প্রচারের অন্তরালে থেকে এমনই একজন লড়ে যাচ্ছেন কর্মহীন, অসহায়, বিপদগ্রস্থ মানুষের জন্য। দিনরাত এসব মানুষের জন্যে উজাড় করে দিচ্ছেন নিজেকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল ইতোমধ্যে প্রায় তিন হাজার পরিবারের মাঝে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা। অসংখ্য শিক্ষার্থী-দিনমজুর-মধ্যবিত্তের হাতে তুলে দিয়েছেন নগদ অর্থও।

করোনাভাইরাসের কারণে যাদের কপালে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে, তারা হল দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। আর্থিকভাবে সচ্ছলদের ঝুঁকিটা স্বাস্থ্যগত। কিন্তু তাদের ঝুঁকিটা শুধু স্বাস্থ্যগত নয়, বরং তার চেয়ে অনেক বেশি সংকটাপূর্ণ। দু’মুঠো খাবারের জন্য নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও অসহায় কর্মহীন মানুষের হাহাকার শুরু হয়েছে।

অনেকেই করোনাকে তুচ্ছ করেই নেমে যাচ্ছেন কাজে। কিন্তু সাধারণ ছুটির এমন সময়ে তাতেও মিলছে না খাবার। রাজধানীসহ সারাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ দিন আনা, দিন খাওয়া। কল-কারখানা বন্ধ থাকায় অনেক শ্রমিকের বেতন বন্ধ, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও বেতন মিলছে না। টিউশনির ওপর নির্ভর করে চলা বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীও রয়েছে বিপাকে। এসব মানুষের কথা ভেবে এগিয়ে এসেছেন খায়রুল হাসান জুয়েল।

রাতের অন্ধকারে রাজধানীতে তিনি নিজেই বাসায় বাসায় পৌঁছে দিচ্ছেন খাবার। রাজধানীসহ সারাদেশেই তার এমন উদ্যোগ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার উদ্যোগ থেকে বাদ যায়নি তৃতীয় লিঙ্গের হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনও। প্রায় অর্ধশতাধিক হিজড়া সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন।

বিপুলসংখ্যক হতদরিদ্র প্রতিবন্ধি মানুষের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন খাদ্য সহায়তা। বস্তিবাসী, ভাসমান মানুষদের জন্য পৌঁছে দিয়েছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও মাস্ক। দিয়েছেন খাদ্য সামগ্রীও।

মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী রাজধানীর মধ্যে নিজেই বাসায় পেঁছে দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে ফোন করলে আর্থিক সহায়তাও করছেন তাদের। এছাড়া কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সহায়তা।

ঘূর্ণিঝড়ে বিপদগ্রস্থ সাতক্ষীরা ও খুলনার কয়রা অঞ্চলে দুই শতাধিক মানুষের কাছে পাঠিয়েছেন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী। অনেককে দিয়েছেন নগদ অর্থ সহায়তাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ূয়া গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করেছেন হেল্প ফান্ড। এ ফান্ডের আওতায় ইতোমধ্যে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নগদ সহায়তা। অনেককে দেওয়া হয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন খায়রুল হাসান জুয়েল। পরবর্তীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। সারাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করেছেন তিনি। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন মাদারীপুর জেলার বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যেও।

তবে বিপুল এ কর্মযজ্ঞের কোনো প্রচার করেননি তিনি। প্রচারের বাইরে থেকেই মানুষের সহায়তায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান জুয়েল।

খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন, মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাইতো স্বাভাবিক। অনেকেই হয়তো আর্থিকভাবে সবল ছিলেন, কিন্তু করোনার এমন দুর্যোগে এখন কষ্টে দিনযাপন করছেন। এমন অনেকে মানুষ রয়েছে যারা সামাজিকভাবে সম্মানিত। তাই এসব প্রচার করে ওইসব মানুষগুলোকে বিব্রত করতে চাইনা।

তিনি বলেন, নানাভাবে সারাদেশে সহায়তা করছি। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আর্থিকভাবে সহায়তার চেষ্টা করছি। প্রতিবন্ধী, হিজড়া সম্প্রদায়ের পাশেও দাঁড়িয়েছি। আমার সামান্য এ সহায়তায় যদি তাদের উপকার হয় তবে এটাই বড় পাওয়া।


সর্বশেষ সংবাদ