চলে গেলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ

মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষাসৈনিক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী, পাবনা-৪ আসনের (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু আর নেই। বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তার মেয়ে মাহজেবিন শিরীন পিয়া বাবা শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শামসুর রহমান শরীফ বেশ কিছুদিন ধরে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। তিনি ক্যান্সার, কিডনিসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ৫ মেয়ে রেখে গেছেন। শামসুর রহমান শরীফ ডিলু পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরপর পাঁচবারেরর নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

তার জানাজা নামাজের সময় এখনও নির্ধারিত হয়নি।

উল্লেখ্য, শামসুর রহমান শরীফের গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীর লক্ষীকুণ্ডা গ্রামে। ঈশ্বরদী পৌর শহরের আলীবর্দী সড়কের বাসভবনে তিনি বসবাস করতেন।

শামসুর রহমান শরীফের রাজনৈতিক জীবন
শামসুর রহমান শরীফের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমসাফল্য আসে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। তারপরই তিনি সক্রিয় ভাবে রাজনিতীতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ক্রমান্নয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি ও পরে ২০০৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির মনোনীত হন।

এর আগে তিনি ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তৎকালীন সরকারের আমলে টানা ৫ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন এবং এরশাদ সরকারের আমলেও তাকে কারাগার বরণ করতে হয়।

তিনি সর্বপ্রথম ১৯৭৯ সালে পাবনা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং পরাজিত হন। পরে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে আবার পরাজিত হন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তে পাবনা-৪ আসনে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিববে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে দল তাকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১, ২০০৯, ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে যোগদান :
ভারত বিভাগের পর নব্য স্বাধীন হওয়া পাকিস্তানে মাতৃভাষার দাবীতে আন্দোলন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবী জানায় ও আন্দোলন চালাতে থাকে। শামসুর রহমান শরীফ ভাষা আন্দোলনে যোগদান করেন। তখন তিনি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। ভাষার দাবীতে মিছিল করায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করে ও জেলে বন্দী রাখে। ১৯৫৯ সালে আইয়ূব খানের মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি হয়। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গ্রেফতার হন। ১৯৬৭ সালে আবারও তিনি কারাবরণ করেন ছয় দফা আন্দোলনের প্রচার করতে গিয়ে। ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিলো। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাবনার মাধপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে তার বাহিনীর ১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা গুলিতে মারা যায় এবং পাকিস্তানি সেনাদের অনেকেই ঐ যুদ্ধে হতাহত হয়। তিনি ৭ নং সেক্টরের অধীনে কাজীপাড়ায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড লিডারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ