২৫ মার্চ ২০২০, ২০:১৭

ভালোবাসার মাত্রা দেখিয়ে দিলেন গৃহপরিচারিকা ফাতেমা

  © সংগৃহীত

দীর্ঘ ২৫ মাস পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর অসুস্থতার কারণে বেশকিছুদিন ধরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়ার সার্বক্ষনিক সঙ্গী ছিলেন গৃহপরিচারিকা ফাতেমা বেগম। বলতে গেলে খালেদা জিয়ার মতোই কারাবাস করেছেন। আজ বিএনপি নেত্রীরসঙ্গে মুক্তি মিলেছে তারও। খালেদা জিয়ার কারাজীবনের একমাত্র সঙ্গী ৩৫ বছর বয়সী গৃহপরিচারিকা ফাতেমাও ফিরেছেন ফিরোজায়।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। এরপর থেকেই তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন ফাতেমা। পরে সবমিলিয়ে দীর্ঘ ৭৭৪ দিন খালেদা জিয়াকে সঙ্গ দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বন্দির সঙ্গে গৃহপরিচারিকা থাকা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি থেকেছেন জেলে কিংবা হাসপাতালে।

তবে বয়স বিবেচনায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার সঙ্গে ফাতেমাকে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান  ওই আদেশ দেন।

শুধু কারাগারেই নয়, অতীতেও যেকোন বিপদে-আপদে খালেদা জিয়ার পাশেই থাকতে দেখা গেছে ফাতেমাকে। সবসময় তার পাশেই থাকতেন। এমনকি খালেদা জিয়ার হাটাচলায় অসুবিধা হলে ফাতেমার সহায়তা নিতেন তিনি। আজ হাসপাতাল থেকে মুক্ত হওয়ার সময়ও খালেদা জিয়ার হুইলচেয়ারের পাশেই দেখা যায় ফাতেমাকে।

ভোলার বাসিন্দা ফাতেমা দীর্ঘদিন ধরেই খালেদা জিয়ার গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসার জন্য আনা হলে সেখানেও আসেন ফাতেমা। কারারক্ষীদের সঙ্গে তিনিও কেবিনে খালেদা জিয়ার সার্বিক দেখাশোনা করতেন।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া রোজা রাখছেন। হাসপাতালের দেয়া খাবার খেতেন না। গৃহকর্মী ফাতেমা প্রতিদিন তার পছন্দের ইফতার তৈরি করে দিতেন।

গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার আবাস্থল ‘ফিরোজা’য় থাকছেন ২০১০ সাল থেকে। তখন থেকেই গৃহপরিচারিকা হিসেবে সবকিছু দেখভাল করতেন ফাতেমা।

ফাতেমার এই ত্যাগ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আরিফুর রহমান তুহিন লিখেছেন, ‘২৫ মাস পর মুক্তি পেল স্বেচ্ছাবন্দী ফাতেমা।’

সাংবাদিক আফজাল বারি লিখেছেন, ‘মন্ত্রীত্ব, এমপিত্ব, বড় পদ বাগিয়েছেন, ব্যাংক, জাহাজ, কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিন্তু যার মাধ্যমে পেলেন তার জন্য ত্যাগ কতটুকু করেছেন? ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দি থাকতে দেব না’, ‘আমায় তোরা জেলে নে আমার মা’কে ছেড়ে দে’-এমন স্লোগান দিয়ে বোধকরি গলাটা ফাটিয়েই ফেলেছেন, কিন্তু এই নারীর চেয়ে ত্যাগী হতে পেরেছেন কি?

নাম তার ফাতেমা- স্বেচ্ছায় বন্দিত্ব বরণ করেছেন। স্বামী, সন্তান সংসার এবং যৌবনও তো তার আছে। মনিবের প্রতি ভালোবাসার মাত্রা কতো তার প্রমাণ তিনিই দেখিয়েছেন। জয় হোক ফাতেমাদের। মূল্যায়য়িত হোক ফাতেমারা।’