প্রেস রিলিজে সরব, বাস্তবে নিরব জয়-লেখক!

নানা অনিয়ম ও বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ দুই নেতা সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য। তবে শোভন-রাব্বানীকে কেন্দ্রীয় পদ থেকে সরিয়ে কমিটির কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য জয়-লেখককে দায়িত্ব দিলেও তারা দৃশ্যমান তেমন কিছু দেখাতে পারছেন না।

সংগঠনের একাধিক সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর জয় লেখক দায়িত্বে আসলেও তারা প্রেস রিলিজ ছাড়া কিছু দিতে পারেননি কর্মীদের। চাঁদাবাজ, ছিনতাই, মাদকদ্রব্যসহ কয়েকটি অনাকাঙ্খিত ঘটনায় জড়িতদের সংগঠন থেকে প্রেস রিলিজ দিয়ে বহিষ্কার, সংগঠন বহির্ভূত কর্মকান্ডে কিছু কিছু কমিটি বিলুপ্তি ইত্যাদি নিয়েই ব্যস্ত। অপরাধের দায়ে সংগঠন থেকে কাউকে বহিষ্কার অথবা কোন কমিটি বিলুপ্তির প্রয়োজন হলে প্রেস রিলিজ দিয়েই দায় থেকে মুক্তি নেন সংগঠনের শীর্ষ এ দুই নেতা।

সংগঠনের কর্মীরা জয়-লেখকের দায়িত্ব পাওয়ার পর তারা আশাবাদী ছিল শোভন-রাব্বনীর নানা অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন জয়-লেখক। তবে নানা অজুহাতে তারা তা করছেন না বলে অভিযোগ নেতা-কর্মীদের।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক উপক্রীড়া সম্পাদক হাসিবুর রহমান তুষার, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক আবু বক্কর আলিফ, মুহসীন হল ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক উপ সম্পাদক ইফতেখার ইসলাম তুষার ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ইমরান ফরহাদ ইমু অস্ত্র মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলেও ছাত্রলীগে এখনো বহাল আছেন। এ ধরণের ঘটনায় অনেকেই জড়িত থাকলেও তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়নি। এসব বিষয় নিয়েও সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে কর্মীরা অভিযোগ করেছেন।

নতুন দায়িত্ব পেয়ে সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর কমিটি গঠন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া, অপরাধীদের বহিষ্কার, ঢাবির হল কমিটিসহ সংগঠনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জয়-লেখক। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার দেড় মাস শেষ হলেও এসবের কিছুই দৃশ্যমান হয়নি।

জানা যায়, ছাত্রলীগের ১১০টি সাংগঠনিক ইউনিট রয়েছে যার মধ্যে মাত্র শোভন-রাব্বানী মাত্র ৫টি ইউনিটের সম্মেলন করলছেন। তবে সেসব কমিটি এখনো পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি জয়-লেখক। শোভন-রাব্বানীর কমিটিতে অর্ধ-শতাধিক বিতর্কিত নেতা স্থান পায়। যাদের মধ্যে গুরুতর অভিযোগে ১৯ জনকে পদচ্যুত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন শোভন-রব্বানী।

তবে ১৯ জনকে পদচুত করলেও শোভন-রাব্বানী কমিটি তাদের নাম উল্লেখ করেনি। তবে জয়-লেখক নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর জানিয়েছিলেন, অতি দ্রুত বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের স্থান দেওয়া হবে। তবে দেড় মাস অতিবাহিত হলেও তারা বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের পদ বঞ্চিতরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, জয়-লেখকের এ কমিটি তাদের আশার সঞ্চার করেছিলো। তারা ভেবেছিলো, ছাত্রলীগের কমিটি কলঙ্কমুক্ত করে যোগ্যদের স্থান দিবে জয় লেখক। তবে দেড় মাস চলে গেলেও তার হদিস মিলে নাই। যার কারণে পদ বঞ্চিত নেতারা আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত রকিব হোসেন বলেন, ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব নেওয়ার সময় তারা বির্তকিতদের ব্যাপারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তারা সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে না। তারা শোভন-রাব্বানীর পথ অনুসরণ করছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা বলার পরেও তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাই এই সংগঠনের বিশৃঙ্খল অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া তারা কার্যক্রম ঠিকমত পরিচালনা না করায় সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। তাই আমরা চাই, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হোক।’

ডাকসু সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতা তানবীর হাসান সৈকত বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটিতে যে বিতর্কিতরা রয়েছে তা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বক্তব্যে স্পষ্ট। তবে আমার প্রশ্ন হলো- এদের কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে না? আবার এই বিতর্কিতরাই বিভিন্ন অকাজ করে ছাত্রলীগের বদনাম রটাচ্ছে। এরা অনেকেই আছে অনুপ্রবেশকারী। এরা ছাত্রলীগের ক্ষতি করতেই ছাত্রলীগ করছে। এদের বিতাড়িত করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথা এরা দলকে যে কোন সময় বিপদে পেলে দিবে।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘বিতর্কিতদের লিস্টের কাজ শেষ পর্যায়ে। অতি দ্রুত এ ব্যাপারে জানানো হবে।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩১ জুলাই। সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১০ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল এক বছর। জেলা শাখাকে উপরিউক্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে আহ্বায়ক বা এডহক কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।” সাংগঠনিক হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জেলা শাখার মর্যাদা পায়। সেই হিসাবে ঢাবি ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ শেষে হওয়ার ৩ মাস হলেও এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত করা হয়নি সনজিত-সাদ্দাম কমিটি।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় আমাদের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অতিদ্রুত সম্মেলন দেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ