যুবলীগের নেতৃত্বে আসছেন সাবেক ছাত্রনেতারা!

নভেম্বরর ২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে দলটিতে। তবে, নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ দুই পদে আসীন হতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন অনেকেই। তাঁরা প্রতিদিনই দলীয় কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাসা ও ব্যাবসায়িক কার্যালয়ে ভিড় জমাচ্ছেন। কর্মীরা পছন্দের নেতার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতারা জানান, যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যদের বেশির ভাগই আগামী কমিটি থেকে বাদ পড়বেন। নানা অপকর্মের দায়ে সমালোচিত সংগঠনটির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম, মেধাবী, দক্ষ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে যুবলীগের আগামী কমিটি গঠন করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সক্ষম—এমন যোগ্য নেতাদেরই নেতৃত্বে আনা হবে। এবার তরুণ নেতারা গুরুত্ব পাবে।’

যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যারা যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সক্ষম, তাদেরই নেতৃত্বে আসা উচিত। তাদের নেতৃত্বে আসতেই হবে।’

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে, এটা নিশ্চিত। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে যাঁরা আছেন তাঁদের প্রত্যেকেই অভিজ্ঞ নেতা। প্রত্যেকেরই গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক অতীত রয়েছে। ফলে যাঁরা আগামীতে নেতৃত্বে আসবেন তাঁরা নবীন ও প্রবীণের ভারসাম্যের দিকে খেয়াল রাখবেন, এমনটাই আশা করি। নবীনের উদ্যম আর প্রবীণের অভিজ্ঞতা মিলিয়েই সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে যুবলীগের কংগ্রেসের বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় আমাদের সঙ্গে গণভবনে বসবেন। সেখানে কংগ্রেস সম্পন্ন করতে আমাদের যে সমস্যা ও সংকট আছে, সেগুলোর সমাধান হবে।’

আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগে বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বয়সসীমা কত হবে তার ওপর নির্ভর করবে আগামী কমিটিতে কারা নেতৃত্ব দেবেন। বর্তমান কমিটির দক্ষ ও ত্যাগী নেতাদের প্রায় সবারই বয়স ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। বয়সসীমা ৬০ বছরের মধ্যে হলে বর্তমান কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসার সুযোগ পাবেন। আর যদি বয়সসীমা ৪৫ বছর বেঁধে দেওয়া হয়, তবে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ভাগ্য খুলে যাবে। সে ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে যুবলীগের চেয়ারম্যান কিংবা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমকে সংগঠনটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিবেচনায় আছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের আন্দোলন-সংগ্রামে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মির্জা আজম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শেখ ফজলুল হক মনির ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফকে যুবলীগের চেয়ারম্যান করতে আগ্রহী আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি অংশ। শেখ মারুফ দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকলেও মূল নেতৃত্বে আসতে পারেননি।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা চমক দেখিয়ে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে পারেন। শেখ পরশ সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসের ভাই। রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও শেখ পরশ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন মহলে সমাদৃত। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেকেই শেখ পরশ বা শেখ তাপসকে যুবলীগের চেয়ারম্যান করার পক্ষে।

যুবলীগের সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের একটি অংশ শেখ তন্ময়কে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক করার পক্ষে। তরুণ নেতা শেখ তন্ময়ের দলীয় নেতাকর্মীর বাইরেও নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ও সুব্রত পাল। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার, সহসম্পাদক তাজউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে মহিউদ্দিন আহমেদ চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। বিগত কমিটিতেও তিনি সাধারণ সম্পাদক পদের জোরালো দাবিদার ছিলেন।

সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগকে ঢেলে সাজানো এবং তরুণদের নেতৃত্বে আনার সিদ্ধান্ত হলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক আলী পান্না, বাহাদুর ব্যাপারী, অজয় কর খোকন, নজরুল ইসলাম বাবু, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের মধ্য থেকে যে কেউ যুবলীগের মূল নেতৃত্বে আসতে পারেন।

যুবলীগের সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের কংগ্রেসে সভাপতিত্ব কে করবেন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কে হবেন সে বিষয়গুলো রবিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে বৈঠকের পর চূড়ান্ত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এরই মধ্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসে বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে রাখা হবে না। সে ক্ষেত্রে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মুজিবুর রহমান চৌধুরী কিংবা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদকে কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করার দায়িত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শহীদ সেরনিয়াবাত বা মুজিবুর রহমান চৌধুরীর মধ্যে কোনো একজনকে সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহ্বায়ক করা হতে পারে।


সর্বশেষ সংবাদ