সরকারি জমিতে আ'লীগ সভাপতির ভবন

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের প্রায় অর্ধকোটি টাকার ভূমি জবরদখল করে দ্বিতল মার্কেট ভবন নির্মাণ করেছেন স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক। আওয়ামী লীগ অফিসের নাম করে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙিয়ে ভবনটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টাও করেন তিনি।

সম্প্রতি সওজের উচ্ছেদ অভিযানে ফেরিঘাট এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও ভবনটি সম্পন্নরূপে গুঁড়িয়ে না দেওয়ায় এলাকার মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় সওজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবন মালিক নিজেই ভবনটি অপসারণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনের উচ্ছেদ অভিযান মুলতবি করা হয়েছে। তবে উচ্ছেদ অভিযানের পর সাত দিন পেরিয়ে গেলেও ওই ভবন এখন পর্যন্ত অপসারণ করা হয়নি।

মান্দা উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় রাস্তার পাশে ২০০৮ সালে সওজের প্রায় পাঁচ শতক জায়গা দখল করে একতলা ভবন নির্মাণ করেন এমদাদুল হক মোল্লা। তার দাবি, সেই থেকে ভবনটি আওয়ামী লীগের অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের দিকে তিনি ভবনটির পরিধি বাড়িয়ে দ্বিতীয় তলা সম্পন্ন করেন।

ভবনটি টিকিয়ে রাখতে ভবনের সামনের অংশে টাইলসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়। ভবনের একটি অংশে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস করা হয় এবং বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। ভবনের সামনে থেকে পাকা রাস্তা পর্যন্ত বাঁশের খুঁটি পুঁতে বেড়া দেওয়া হয়।

এদিকে, মান্দা উপজেলার নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্ত করার জন্য ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। তখন উপজেলার ফেরিঘাটে সওজের জায়গায় গড়ে তোলা স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হলেও ভবনটির সামনের সামান্য অংশ ভাঙা হয়। ভবনের মালিক আবারও ভাঙা অংশগুলো সংস্কার করে ভবনটি আরও আকর্ষণীয় করে তোলেন।

এ বছর আবারও নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজশাহী-নওহাটা-চৌমাশিয়া সড়কের উভয় পাশে উচ্ছেদের নোটিশ দেয় নওগাঁ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।

অভিযানের দ্বিতীয় দিন ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফেরিঘাটে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করে সওজ। এ সময় অনেকেই নিজ থেকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেন। তবে এবারও মোল্লা এমদাদুলের দখল করা ভবনটির সামনের অংশ সামান্য ভেঙে চলে যান অভিযান পরিচালনাকারীরা।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। স্থানীয় মিরাজুল ইসলাম, আকবর হোসেন, জাফর আলীসহ অনেকেই বলেন, দুই বছর আগেও ভবনটির সামান্য অংশই ভাঙা হয়েছিল। পরে তা ঠিক করে নিয়েছে দখলদার। এবারও সন্দেহ ছিল, ভবনটি ভাঙা হবে না; যা সঠিক হয়েছে। উপজেলার কয়াপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ফেরিঘাটে গরিব মানুষ রাস্তার পাশে দোকান দিয়ে জীবন-জীবিকা চালাত। তাদের সব দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই একটি ভবন ভাঙা হচ্ছে না। সওজ ইচ্ছে করেই এমনটা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই ভবনটি আবার মেরামত করে নেওয়া হবে বলে ধারণা করেন তিনি।

তবে মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোল্লা এমদাদুল হক বলেন, সরকারি জায়গাটি তিনি ৯৯ বছরের জন্য ইজারা (লিজ) নিয়েছেন। ইজারা নেওয়া জায়গায় কোনো ভবন নির্মাণ করা যাবে না- এটা তার জানা ছিল না। এ অবস্থায় নিজেরাই ভবনটি অপসারণ করে নেওয়ার জন্য তিনি সওজের কাছে আবেদন করেন। তখন সওজ থেকে একটি স্ট্যাম্প (দলিল) নিয়ে আসতে বলা হয়। দলিল নিয়ে আসার আগেই ভবনটির সামনের অংশ ভেঙে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ওখানে আগেও একটি আওয়ামী লীগের দলীয় অফিস ছিল। পরে সেখানে দোতলা একটি ভবন করার পর নিচের অংশের পেছনের দিকে পার্টি অফিস করা হয়। আর সামনে দিকে দোকানঘরের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভবনের ওপরের অংশেও ভাড়া দেওয়া ছিল। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ছিল, সেটাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।'

এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার জসিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হামিদুল হক বলেন, ওই এলাকায় যে পরিমাণ অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কথা ছিল, তা সময়ের অভাবে সম্ভব হয়নি। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে উচ্ছেদ অভিযান মুলতবি করা হয়েছে। ভবনের ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রায় ছয় থেকে সাত শতক জায়গার ওই ভবনটি সম্পূর্ণ সওজের জমিতে পড়েছে। মালিক নিজ থেকে সেটি ভেঙে নিতে চেয়েছেন। যদি তারা ভবনটি ভেঙে না নেয়, আগামী ১০-১৫ দিন পর আবারও সওজ ঢাকা জোনের উপসচিব মাহবুবুর রহমান ফারুকী সেটি ভাঙার উদ্যোগ নেবেন। তখন ভবনটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ