শোভন-রাব্বানীর অপসারণ: কি ভাবছেন নেতারা?

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের ঘটনায় টনক নড়তে শুরু করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের। শোভন-রাব্বানীর পদচ্যুতিকে বাকি সবার প্রতি ‘কঠোর বার্তা’ হিসেবেই দেখছেন অনেকে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ নিজেদের আইন–আদালতের উর্ধ্বে ভাবতে শুরু করেছেন বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ। দলের নেতাদের প্রত্যাশা, শেখ হাসিনান কঠোর অবস্থান ওই সব নেতাদের ‘কাজে’ লাগাম টেনে ধরবে।

তবে দলটির কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা এও মনে করেন, দলটির সব পর্যায়ের নেতারা আদৌ এই বার্তা মেনে কাজ করবেন কি না তা নিয়ে তাঁদের মধ্যেই সংশয় আছে। যদিও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধ যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা ‘নজিরবিহীন’। এটা অতীতে কখনো হয়নি। অপরাধ করলে কেউই ছাড় পাবে না।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ও এর আগে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন তিনজন নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। তাদের পদচ্যুত করেছেন। তবে আলোচনা কেবল ছাত্রলীগের দুই নেতার ‘অপকর্ম’র মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আচরণ, কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাউকে কাউকে ইঙ্গিত করেও কথা বলেছেন।

ওই নেতারা বলেন, মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন বলেই তাদের মনে হয়েছে। এই নেতাদের নিয়ে বাইরে নানা সমালোচনা আছে। বিশেষ করে চাঁদাবাজি, কমিশন নেওয়ার মধ্যে কাজের সঙ্গে এরা ‘খারাপ’ ভাবে জড়িয়ে গেছেন।

এই তিন নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব খবরই তিনি রাখেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেলেই তিনি ব্যবস্থা নেবেন। তাঁরা বলছেন, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের বাসায় পুলিশ তল্লাশি করেছে। সেটা অতীতে কখনো হয়নি। আজমেরী ওসমানকে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ত্বকী হত্যার প্রধান অভিযুক্ত বলে মনে করা হয়। এ ঘটনায় তাদের মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কাউকে ছাড় দেবেন না।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানা ঘটনা এখন সামনে আসছে। ব্যক্তি (ইনডিভিজুয়্যাল) অপরাধ দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকগুলোতে সরাসরি কারও নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও মূল দলের কারও কারও ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ওই সূত্রের দাবি এসব নেতাদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এসেছে।

নাম প্রকাশনা করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত সৎ ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাদের বাইরে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে তাদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কথাবার্তায় এমনটাই মনে হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম মনে করেন, এই ঘটনা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর জন্য একটা সতর্ক বার্তা। তিনি এ থেকে সব পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সতর্ক হওয়ার আহ্বানও জানান। গণমাধ্যমকে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, শোভন-রাব্বানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউই অপরাধ করে ছাড় পাবেন না, এটাই দলীয় প্রধান বলে দিয়েছেন। ফলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। কোনো অপকর্মে জড়ানো দলের নেতা-কর্মীদের উচিত হবে না।

দলটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই দলের নেতা কর্মীদের অপকর্মে জড়িয়ে পড়াকে অপছন্দ করেন। তবে সময় ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকে না। কিন্তু কোনো অভিযোগ প্রমাণ হলে কী ধরনের ব্যবস্থা তিনি নেবেন তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এই নেতা বলেন, দল দলের নেতা কর্মীদের ব্যাপারে কঠোর হচ্ছে। দলের বিরুদ্ধে বা দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা যাচ্ছেন তাদের ইতিমধ্যে শোকজ করা হচ্ছে। ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গে আছেন এমন নেতাদের কর্মকাণ্ডও খুঁজে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, রোবাবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বলেছেন, শোভন-রাব্বানী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। এ জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ