সংসদে মামলা সচল বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানালো কোটা আন্দোলনকারীরা

  © ফাইল ফটো

গত বছরের ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল চুরির ঘটনার মামলা সচল করতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে মামলা সচল করে অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা প্রকৃত দোষীদের অতি দ্রুত সময়ে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান। এছাড়া তাদের আন্দোলনে সহিংসতা সৃষ্টিকারী ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তেরও দাবি করেছে। একইসঙ্গে এই ঘটনায় কোটা আন্দোলনকারী নির্দোষ নেতাকর্মীদেরকে মামলার আসামী করে অযথা হয়রানি করা হয়েছে এবং হচ্ছে বলেও জানান সংগঠনটি। 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুক্রবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিক্রিয়া জানায় সংগঠনটি। 

৮ এপ্রিল রাতে সহিংসতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হলাে যে কোটা আন্দোলনের সাথে সাথে ভিসির বাড়িতে আগুন, তাঁর বেড রুম পর্যন্ত ঢুকে যাওয়া, আলমারি ভেঙে যা কিছু সােনাদানা ছিলাে লুট করে নিয়ে যাওয়া। এই ধরনের ঘটনা তাে আমরা কখনাে দেখিনি মাননীয় স্পিকার। মানে এমনভাবে আগুন দিয়ে গাড়ি পােড়ানাে হলাে সিসিটিভিটা তুলে নিয়ে যাওয়া হলাে এবং এই যে আক্রমণটা। তবে এটা তদন্ত করে আশেপাশে অন্যান্য বিল্ডিং এ সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলাে সেখান থেকে ফুটেজ তৈরী করে এটা কিন্তু মামলা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এই মামলাগুলি সচল করে শাস্তি দেয়া দরকার। যেন ভবিষ্যতে আর কেউ কখনাে এমন করতে না পারে। কারণ এতাে টাকা বলতে গেলে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই পয়সা দিয়ে পড়বে। হ্যাঁ আমরা দেশের কথা চিন্তা করি, মানুষের কথা চিন্তা করি। আমার নিম্ন বিত্ত মধ্যবিত্ত ছেলেমেয়েরা আসে পড়তে তাদের কথা চিন্তা করেই কিন্তু যত টাকা লাগছে আমরা কিন্তু দিয়ে যাচ্ছি। দিয়ে আমরা পড়াশােনার একটা পরিবেশ আমরা রাখার চেষ্টা করছি। তাই সেভাবে পড়াশােনা করে তারা দেশের জন্য কাজ করুক সেটাই আমরা চাই যেন আমার দেশ আরাে উন্নত হয়।’

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কোটা আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাতে উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত লােকজনকে আসামি করে শাহবাগ থানা পুলিশ তিনটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে একটি মামলা হয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ও অন্যগুলােতে ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা দান, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের বিশেষ শাখার একজন কর্মকর্তার মােটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার অভিযােগের কথা উল্লেখ করা হয়। ভিসির বাসায় হামলার পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের পক্ষ থেকে ভিসির বাসায় হামলাকারীসহ শিক্ষার্থীদের উপর রড রামদা ও পিস্তল নিয়ে হামলাকারী সকলের বিচার চাওয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই মামলাগুলােতে কোটা আন্দোলনের নির্দোষ নেতাদেরকে ও গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয় কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা কোন সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি।’

তারা আরও দাবি করেন, ‘বর্তমানে কোটা আন্দোলনের পৃথক ৫ মামলায় মাে. রাশেদ খান, সাখাওয়াত হােসেন, মশিউর রহমান, জসীম উদ্দিন আকাশ, ফারুক হাসান, তরিকুল ইসলাম, সোহেল ইসলাম,মাহফুজুর রহমান খান মাসুদ সরকার সহ সবাই জামিনে মুক্ত আছেন। অনেকের নামে একাধিক মামলা আছে এবং প্রত্যেকেই সব মামলায় জামিন পেয়েছেন। এছাড়া ফেসবুক লাইভে এসে বিভিন্ন উসকানিমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করার অভিযোগে রমনা থানায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। লুৎফুর নাহার জুমার নামে যে মামলায় লুমাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে কোন সংশ্লিষ্টতা পায়নি তদন্ত কর্মকর্তারা। লুমা এখন জামিনে মুক্ত আছে।’

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আর বলা হয়, ‘কোটা আন্দোলনের নির্দোষ নেতাদের এই মামলা গুলােতে জড়ানাের ফলে একদিকে যেমন নিয়মিত তাদের কোর্টে গিয়ে হাজিরা দিতে হচ্ছে। ছাত্রজীবনে মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে গিয়ে স্বাভাবিক ছাত্রজীবন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফলতির দরুন প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে পারছে না। একের পর এক তদন্ত প্রতিবেদনে পিছিয়ে দিচ্ছে।’

কোটা আন্দোলনকারীরা বলেন, আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসন নির্দোষ ছাত্রনেতাদের আর হয়রানি না করে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবে। পাশাপাশি যারা দিনে দুপুরে জনসম্মুখে কোটা আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালিয়েছে তাদের ও বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যেন পবিত্র শিক্ষাঙ্গণে এই ধরনের সহিংস ঘটনা আর কেউ ঘটনা সাহস না করে।

মামলার তদন্ত কাজে সহযোগিতা সম্পর্কে বলেন সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা তদন্তকারী সকল সংস্থাকে শুরু থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তদন্ত কাজে সকল ধরনের সহযােগিতা করে আসছি এবং প্রয়ােজনে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করতে আমাদের সকল ধরনের সহযােগিতা অব্যাহত থাকবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা সৃষ্টিকারী ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।’

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এ বিষয়ে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভিসির বাসা ভাংচুর ছিলো একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমাদের ফাঁসাতে রাঘববোয়ালরা তাদের সন্ত্রাসীরা এই কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। কিন্তু বাঙালি জাতিকে এই ব্লেমগেইম খাওয়ানো যায়নি। আজকে বাংলাদের মানুষ জানে যে, কারা পরিকল্পনা করে এই কাজ ঘটিয়ে নিরীহ ছেলেগুলোকে ফাঁসানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। আসলে, রাখে আল্লাহ, মারে কে? বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ আমাদের বিপদে প্রতিটা মুহুর্তে সাপোর্ট দিয়েছে। আশা করি, অদূরভবিষ্যতেও সকল ষড়যন্ত্রকারীদের নীল নকশার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে থাকবে।’


সর্বশেষ সংবাদ