মাশরাফির বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস: সেই অধ্যাপককে রাঙামাটি বদলি!

রাঙামাটিতে বদলি করা হলো সেই চিকিৎসক ডা. এ কে এম রেজাউল করিমকে। জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর শোকজ করা হয়েছিল রেজাউল করিমকে। এবার জানা গেল, সেই রেজাউলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে বদলি করে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই বদলির আদেশ পেলেন রেজাউল।

একটি সূত্র জানায়, গত ২৬ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই বদলির আদেশ জারি করে। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের পার-১ অধিশাখার উপ-সচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ওই বদলি আদেশে স্বাক্ষর করেন। যা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে আদেশে উল্লেখ রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসিডেন্ট ডা. আহমাদ হাবিবুর রহিম। তিনি লিখেছেন, ‘মাশরাফি ইস্যুতে ফেসবুকের একটা কমেন্টের জের ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজির একমাত্র অধ্যাপককে ডা. রেজাউল করিম স্যারকে সম্প্রতি শোকজ করা হয়। এবার তাঁকে শাস্তিমূলক ওএসডি করা হয়েছে। এটাচমেন্টে রাখা হয়েছে দুর্গম রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। স্বাভাবিক কারণেই সেখানে হেমাটো অনকোলজি বিভাগ নাই। সুতরাং আপাতত তাঁর অর্জিত জ্ঞান কাজ লাগানোর সুযোগ বন্ধ। অতএব আপাতত তিনি কাজের চাপ মুক্ত!

তাঁকে ট্রান্সফার করলেন যারা তারা কি জানেন কতো ভয়াবহ একটি ঘটনা ঘটেছে? চটগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিবছর লক্ষাধিক ক্যান্সার শিশু চিকিৎসা নেয়। প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকে শতাধিক শিশু। হাজার ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর জীবনের সাথে অনেক বড় একটা অবিচার হয়ে গেলো। স্যার দেশের মাত্র তিনজন পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজির অধ্যাপকের একজন। অথচ এখন তার এই জ্ঞান কাজে লাগানোর রাস্তা সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে গেলো। ব্লাড ক্যান্সার সহ আরও অন্যান্য ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুগুলো এখন কোথায় যাবে? কার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেবে? অসহায় পরিবার গুলোর কী অবস্থা হবে আমরা কি একটু চিন্তা করতে পারছি?

সরকারী দপ্তরের শৃঙখলা রক্ষার্থে অনেক সিদ্ধান্তই নিতে হয়। কিন্তু সেখানে রিস্ক বেনিফিট রেশিওটা কী মাথায় রাখতে হবে না? স্যার কি কোন দুর্নীতি করেছেন? অন্যায় ভাবে রোগীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন? অফিসে না গিয়ে দিনের পর দিন বেতন তুলেছেন? মোটেও না। সামান্য এক কমেন্টে কী এমপি মাশরাফি সাহেবের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে? কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষতিটা কিন্তু এখন অবশ্যই চোখে পড়ার মতো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এমপি মাশরাফি সাহেব এ ব্যাপারটা জানেন না। নাহলে উনি নিজেই এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের হাজারো ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু গুলোর জন্য সমবেদনা। এখানে অধ্যাপক রেজাউল করিম স্যারের কোন ব্যক্তিগত ক্ষতি নেই। বরং প্রতিদিন শত শত ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসার তত্ত্বাবধানের যে কষ্ট আর দুঃশ্চিন্তা ছিলো তা থেকে তিনি আপাতত মুক্তি পেয়ে গেলেন। এখন তিনি রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে আগের তুলনায় অনেক কম কাজের চাপেই থাকবেন। কিন্তু ক্ষতিটা হয়ে গেলো আমাদের; অসহায় ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের; এই হতভাগ্য বাংলাদেশের।

এই সিদ্ধান্তটা নিয়ে কী আবার একটু চিন্তা করবেন কর্তা ব্যক্তিরা? আমরা কী দিনশেষ অসংখ্য জীবনের বিপরীতে কী সামান্য কিছু কথাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করবো? নাকি মানবতার পাল্লাই বেশি ওজন পাওয়ার দাবী রাখে?’’ 

গত এপ্রিল মাসের ঘটনা। ঝটিকা এক সফরে মাশরাফি বিন মুর্তজা হাজির হয়েছিলেন নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের কাছ থেকে নানা সমস্যার কথা শুনে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পান, পুরো হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র একজন ডাক্তার। মাশরাফি জানতে পারেন, ছুটি ছাড়াই একজন চিকিৎসক ৩ দিন অনুপস্থিত রয়েছেন!

ক্ষিপ্ত হয়ে মাশরাফি রোগী সেজে ওই চিকিৎসককে ফোন করেন। ওই চিকিৎসক ফোনে রোগীকে অর্থাৎ মাশরাফিকে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। এ সময় নিজের পরিচয় দিয়ে মাশরাফি ডাক্তারকে বলেন, ‘এখন যদি হাসপাতালের সার্জারি প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কী করবে? চুপ করে আছেন কেন? আপনি কি ফাইজলামি করেন? চাকরি করলে নিয়ম মেনেই করবেন।’

এরপর মাশরাফি সেই ডাক্তারকে তার কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দ্রুত কর্মস্থলে ফিরে আসার নির্দেশ দেন। হাসপাতালে মাশরাফির ঝটিকা সফর ও চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনালাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পেতেই শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনার। অনেকে সাংসদ মাশরাফির এমন কাণ্ডে বাহবা দিয়েছিলেন তো আবার অনেকে এর সমালোচনাও করেছেন। বিশেষ করে চিকিৎসকদের অনেকেই এই ইস্যুতে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এমনকি কোনো কোনো চিকিৎসক মাশরাফিকে অসম্মান করে ফেসবুকে পোস্টও দেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ডা. এ কে এম রেজাউল করিম।

গত ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটো অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম তার টাইমলাইনে লেখেন, ‘বাংলাদেশের ডাক্তারদের বোল্ট (বোল্ড) করতেই বড়ই আনন্দ। ম্যাশ চিকিৎসার জন্য অনেকবার ডাক্তারদের ছুরি কাঁচির নিচে গেছেন। তাদের অনেক তোয়াজ করতে হইছে। সেই ডাক্তারের বংশবদ পাইছি এবার।’ যদিও নিজের দেয়া স্ট্যাটাস নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে ডা. একেএম রেজাউল করিম তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘ডিঅ্যাক্টিভ’ করে দেন।

এ ঘটনায় ৬ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিমসহ ৬ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। অভিযুক্ত চিকিৎসকদেরকে নোটিশ প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

পড়ুন: মিন্নিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিয়ে করেছিল নয়ন!


সর্বশেষ সংবাদ