দ্বিতীয় দিনের মত অনশনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা

  © সংগৃহীত

রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে টানা দ্বিতীয় দিনের মত অনশন কর্মসূচি পালন করছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটি করতে বয়সসীমা বাতিলসহ বিএনপি চেয়ারপার্সনের মুক্তি দাবিতে এ আন্দোলন করছেন তারা। সাবেক ছাত্রনেতাদের কর্মকান্ডের বিরোধিতার পাশাপাশি নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার কড়া সমালোচনাও করেছেন আন্দোলনকারীরা।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পূর্বঘোষিত অনশনে অংশ নেন ছাত্রদলের শতাধিক নেতাকর্মী। এতে নানা ধরণের ব্যানারও বহন করছেন তারা। এছাড়া দাবি আদায়ে নানা ধরণের স্লোগানও দিচ্ছেন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।

ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত করা কেন্দ্রীয় কমিটিরসহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। বলতে গেলে এই সংগঠনের জন্য সবকিছু উৎসর্গ করেছি। তাই আন্দোলন সংগ্রামের কথা মাথায় রেখে এবং ছাত্রদলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ধারাবাহিক কমিটি দিতে হবে।’

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ছাত্রদলকে দূর্বল করতে এবং আন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ করতে একটি কুচক্রী মহল ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অবিলম্বে শর্ত বাতিল করে ধারাবাহিক কমিটি দেওয়ার দাবি জানান তারা।

এর আগে রোববার বেলা ১১ টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের পূর্বনির্ধারিত অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় দাবি আদায়ে নানা ধরণের স্লোগান দেন তারা। এর আগে ছাত্রদলের নেতাদের দাবির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে এবং সংকটের সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয় বিএনপি। সে আলোকে ২৪ ঘণ্টার জন্য কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

সে সময়সীমা শেষ হওয়ায় বৃহস্পতিবার আবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। তবে পরে সেই কর্মসূচি স্থগিত করার কথা জানান ছাত্রদল নেতারা। পরে রোববার আবার কর্মসূচি পালন শুরু করেন তারা।

ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবির বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের যৌক্তিক দাবি জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ছয় মাসের মধ্যে একটি কমিটি, আগামী জানুয়ারিতে এক বছরের জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছিলো। বিএনপি নেতাদের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত করা হয়েছিলো। কিন্তু এ নিয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু জানানো হয়নি বলে তারা আবার কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, বিএনপির সার্চ কমিটিসহ দলের জেষ্ঠ নেতারা আস্থা রাখার কথা বলেছিলেন। যে কারণে বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূটি স্থগিত করা হয়েছিলো। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত দাবির বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। সে কারণে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি শুরুর কথা জানান তিনি।

গত ৩ জুন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কেন্দ্রীয় কমিটি বাতিল করে বিএনপি। একইসাথে ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন কেন্দ্রীয় সংসদ গঠন করা হবে বলে জানানো হয়। পরে ছাত্রদলের কাউন্সিল উপলক্ষে তিনটি কমিটি গঠন করে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচন পরিচালনা, বাছাই ও আপিল কমিটির কথা জানানো হয়।

এরপরই আন্দোলনে নামেন ছাত্রদলের একটি অংশ। কারণ, নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে হঠাৎ করেই বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ছাত্রদলের অনুষ্ঠেয় কাউন্সিলে প্রার্থী হতে হলে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হওয়ার পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যেকোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

তবে এ নিয়ম মানতে রাজি নন ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির অধিকাংশ নেতা। তারা জানিয়েছেন, এভাবে কমিটি করা হলে ছাত্রদলের বড় একটি অংশ বঞ্চিত হবেন। দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় তারা ছাত্রদল থেকে কিছুই পাননি। এখন এভাবে বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে কমিটি করা হলে তাদের আর কিছুই করার থাকবে না। এজন্য অন্তত ছয় মাসের জন্য হলেও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়ার দাবি তাদের। এছাড়া কয়েকজনের ব্যক্তি স্বার্থে এ নিয়ম করা হয়েছে বলেও তারা মনে করেন।


সর্বশেষ সংবাদ