জীবন আর কখনো আনন্দের হবে না— ভিডিও বার্তায় ফাহিম সালেহের বোন

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণ উদ্যোক্তা ও পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর হত্যাকাণ্ডের এক মাসের মাথায় তার বোন রুবী সালেহ আবেগঘন এক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) ওই ভিডিও বার্তায় রুবী সালেহ বলেছেন, ভাইয়ের হত্যার বিচার হওয়ার জন্য তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাবেন।

ভিডিও বার্তায় তিনি তার ভাইয়ের মৃত্যুতে তাঁদের পরিবারের ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, জীবন আর কখনো আনন্দের হবে না।

রুবী তাঁর আবেগঘন ভিডিও বার্তায় স্মরণ করেন হত্যাকাণ্ডের দিন গত ১৩ জুলাই ফাহিম সালেহ কেমন করে তিন মাইল দৌড়ে ম্যানহাটানের অ্যাপার্টমেন্টে ফিরেছিলেন। এরপরই তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হোন। রুবী সালেহ বলেন, ১৪ জুলাই সকাল ১০টা ৪৭ মিনিটে যখন আমার ফোন বেজে ওঠে, তখনো আমি ছিলাম বিছানায়।

এই ফোনটি ছিল রুবি সালেহর এক আত্মীয়ের, যিনি এক ভয়াবহ দুঃসংবাদ দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। ফোনে তিনি যখন বলেন যে একটি দুঃসংবাদ আছে, তখনো রুবী সালেহর পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না যে ঠিক কী শুনতে যাচ্ছেন তিনি। ভেবেছিলেন, তাঁর মা-বাবা বা পরিবারের কারও হয়তো কোভিড-১৯ হয়েছে। এই ভেবেই তিনি শঙ্কিত হন। কিন্তু যখন শোনেন যে দুঃসংবাদটি তাঁর ভাই ফাহিম সালেহ–সম্পর্কিত, তখন তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান। ‘ফাহিম আর আমাদের মধ্যে নেই’—এই কথাটা তাঁর কাছে কোনো অর্থই তৈরি করছিল না।

রুবী সালেহর ভাষায়, কী করে আমার স্বাস্থ্যবান, তারুণ্যে ভারা সৃষ্টিশীল ও সুন্দর ৩৩ বছর বয়সী ভাই আমাদের মধ্যে না থাকতে পারে?

পরে বোনকে ফোন করে যখন নিশ্চিত হন ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়ে, তখন রুবী আক্ষরিক অর্থেই চলনশক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরদিনই রুবী নিউইয়র্ক নগরে আসেন। ততক্ষণে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম একজন তরুণ উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার খুন হওয়ার সংবাদে সয়লাব।

সেই খবরগুলো কতটা পীড়া দিচ্ছিল, তা বলতে গিয়ে রুবী বলেন, তারা কথা বলছিল আমার ছোট ভাই সম্পর্কে। আমার ফাহিম, যাকে আমার মা-বাবা আমার আট বছর বয়সে থাকতে হাসপাতাল থেকে কম্বলে জড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন। ফাহিমের সঙ্গে আমি বেড়ে উঠেছি। একজন বোন নয়, একজন মায়ের মতো করে। তাকে আমি খাইয়েছি, তাকে গোসল করিয়েছি, তার ডায়াপার বদলে দিয়েছি।...আর আজ তিরিশ বছর পর আমার কাছে খবর এল যে ফাহিমের খণ্ডিত দেহ গার্বেজ ব্যাগে পাওয়া গেছে, যেন তার জীবনের কোনো মূল্যই নেই।

ফাহিম সালেহর সাবেক ব্যবসায়ী পার্টনার কেমন করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সালেহর মহানুভবতার কথা জানিয়েছেন, সে কথা রুবী ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেন। রুবী জানান, ঘরের ফায়ারপ্লেসের সামনে তাঁর বাবা ফাহিম সালেহর ছবি রেখে ছেলের স্মৃতি ধরে রেখেছেন। রুবী বলেন, ছবিগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়া-আসার সময় মনে পড়ে ফাহিম সালেহ প্রকৃতই কে ছিল। মনে পড়ে, সে আজ আমাদের মধ্যে আর নেই!

রুবি তাঁর ভিডিও বার্তায় বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবার ফাহিম সালেহর হত্যার বিচার নিশ্চিত হওয়ার জন্য কাজ করে যাবেন। তিনি বলেন, আমার ভাইকে বড় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ভিডিও বার্তা ছাড়াও রুবী সালেহ মিডিয়াম ডটকম নামের একটি ওয়েবসাইটে ভাইকে নিয়ে লিখেছেন। তাঁদের বাবার বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে এবং পরে সৌদি আরব থেকে আমেরিকায় স্থানান্তরের বর্ণনা দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ