দেলোয়ার থেকে দিলদার, জনপ্রিয়তায় নায়কদের চেয়ে কম যাননি

  © ফাইল ফটো

অভিনেতা দিলদার হোসেনের মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল দেলোয়ার হোসেন। এদিকে এক মামার নামও ছিল দেলোয়ার হোসেন। তাই চলচ্চিত্রে আসার আগে ভাবলেন, নামটা বদলে ফেলবেন। সবার সম্মতিতে রাখলেন দিলদার হোসেন। বদলে যাওয়া এই নামেই তিনি ঠাঁই করে নেন দর্শক হৃদয়ে।

জনপ্রিয় হিসেবে নায়কদের চেয়েও কোনো অংশে কম ছিলেন না দিলদার। তাঁর অভিনয় ব্যতিক্রম। আঙ্গিক এবং বাচিক অভিনয়ে তাঁর স্বকীয়তা ছিল। সিনেমা হলে মুগ্ধ হয়ে সেই অভিনয় দেখতে যেতেন দর্শক। হলে দর্শক টানতে ছবির প্রচারণায় আলাদা গুরুত্ব পেতেন এই কৌতুক অভিনেতা। টেলিভিশনের পর্দায় এখনো প্রয়াত অভিনেতা দিলদারের উপস্থিতি তেমনটাই জানান দেয়। ২০০৩ সালের এই দিনে (১৩ জুলাই) ৫৮ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

২০ বছর বয়সে তিনি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। তার পর থেকেই নিজের জগৎ চেনাতে থাকেন এই অভিনেতা। দিনে দিনে তিনি কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অনন্য প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে থাকেন বাংলা চলচ্চিত্রে। একসময় তাঁর জন্য লেখা হতে থাকে আলাদা গল্প। এমনও সময় গেছে, প্রযোজকদের আস্থা ছিল দিলদার মানে হিট ছবি। মানুষকে হাসিয়েই তিনি পেয়েছেন যেমন খ্যাতি, তেমনি কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। তিনি মারা যাওয়ার পর বাংলা চলচ্চিত্রে কৌতুক অভিনয়ের সেই জায়গাটা এখনো খালি রয়ে গেছে। শক্তিমান এই অভিনেতা জীবদ্দশায় এই শূন্যতা নিয়ে ভাবতেন। তিনি জনপ্রিয় হিসেবে নায়কদের চেয়েও কোনো অংশে কম ছিলেন না। বাংলা চলচ্চিত্রে এই অভিনেতার ৩৮ বছরের ক্যারিয়ার। তিনি অভিনয় করেছেন পাঁচ শতাধিক ছবিতে। 

প্রয়াত এই অভিনেতার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মাসুমা আক্তার রুমা দন্তচিকিৎসক। পরিবার নিয়ে থাকেন নিকেতনের বাসায়। তিনি বলেন, প্রথম দুবছর বাবাকে স্মরণ করা হতো। এখন আমরাই পারিবারিকভাবে স্মরণ করি। চলচ্চিত্র থেকে যাঁরা বাবাকে স্মরণ করার কথা, তাঁরাই দিনটি ভুলে থাকেন। বাবা তাঁর প্রিয় মানুষদের কাছে এত তাড়াতাড়ি মারা যাবেন, ভাবিনি।

দিলদারের জামাতা জে এম হারুন-অর রশিদ। তিনি দিলদারের ভাগনে। পরে দিলদার হোসনের মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় জে এম হারুন-অর রশিদের। আক্ষেপ করে তিনি বললেন, ফুফা (দিলদার হোসেন) ছিলেন খুবই অমায়িক মানুষ। এমন মানুষটি মারা যাওয়ার পর কেউ কোনো দিন তাঁর খবর নেয়নি। এটায় আমরা সবাই কষ্ট পেয়েছিলাম। শিল্পীদের প্রতি শিল্পীদের সেই টানটা হয়তো নেই।

দিলদারের ছোট মেয়ে জিনিয়া আফরোজ। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রের জন্য বাবা তাঁর পুরোটা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপাদমস্তক চলচ্চিত্রের মানুষই ছিলেন। চলচ্চিত্রের ব্যস্ততায় দিনের পর দিন বাবার চেহারাটাও দেখতাম না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখতাম বাবা ঘরে নেই। আর রাতে যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়তাম, তখন বাসায় ফিরতেন। সবার কাছে তখন বাবার কত কদর। কত লোকজন আসতেন বাসায়।

দিলদারের নিজস্ব বাসা ডেমরার সানারপাড়ে থাকেন তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। এই অভিনেতা ১৯৪৫ সালে চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। 


সর্বশেষ সংবাদ