ঈদের দিনে নজরুলের জয়ন্তী

  © সংগৃহীত

প্রতিবছর রমজানের শেষের দিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি বাজতে থাকে চারদিক। ধর্ম-নির্বিশেষে সবার মনে সমান দোলা দিয়ে যায় এই অসাধারণ নজরুল-সৃষ্টি। রমজান শেষে আজ সোমবার (২৫ মে) খুশির ঈদ। এ দিনই কবি নজরুলের ১২১তম জন্মবার্ষিকী।

ঈদের দিন এক ভিন্ন পরিস্থিতিতে, ভিন্ন পরিবেশে আজ তাঁকে স্মরণ করা হবে। করোনাভাইরাসের প্রকোপে এ বছর কবির জন্মদিন সেভাবে পালন করা যাবে না। তাই বলে থেমে থাকবে না জন্মদিনের উৎসব। ভার্চ্যুয়াল নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হবে জন্মোৎসব।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্মিত ‘জাগো অমৃত পিয়াসী’ শীর্ষক আনুমানিক ৫০ মিনিটের একটি বিশেষ অনুষ্ঠান আজ বেলা ১১টা বা নিকটতম সময়ে বিটিভিসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে সম্প্রচারিত হবে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানের সঙ্গে নাচ করেছেন দেশ-বিদেশের নৃত্যশিল্পীরা। করোনাকালে কবির জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর গানে গানে নাচের আয়োজন করেছেন তাঁরা। সেসব নাচের ভিডিও জড়ো করে একযোগে প্রকাশিত হবে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। নজরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘কবি নজরুল ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যেখানেই অন্যায়-অবিচার, সেখানেই কবির কলম হয়ে উঠেছে খাপছাড়া তলোয়ার। বিশ শতকের প্রথম দুই দশকে যখন নজরুলের শৈশব, কৈশোর অতিক্রান্ত হচ্ছিল উপমহাদেশে, তখন স্বাধীনতা আন্দোলন ও ব্রিটিশ শাসনবিরোধী সংগ্রাম চলছিল।’

তিনি বলেন, ‘নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তা বাস্তবায়নে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের কর্ম, চিন্তা ও মননে নজরুলের অবিনশ্বর উপস্থিতি বাঙালি জাতির প্রাণশক্তিকে চিরকাল জাগরিত রাখবে।’

এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বলেন, ‘নজরুল যে অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম ও কর্মে।’

নজরুলকে প্রকৃতই প্রেমের এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম। বাবা কাজী ফকির আহমেদ এবং মা জাহেদা খাতুন। ১৯৭২ সালে তৎকালীন সরকার তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। কবি ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ইন্তেকাল করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।


সর্বশেষ সংবাদ