আষাঢ়-শ্রাবণে ভাসে হৃদয়ের দু’কূল, অঙ্গনের সারথী আজ রবীন্দ্র-নজরুল

‘আষাঢ়-শ্রাবণে ভাসে হৃদয়ের দু’কূল, অঙ্গনের সারথী আজ রবীন্দ্র-নজরুল’ স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) রবীন্দ্র নজরুল স্মরণ ও বর্ষ উদযাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অঙ্গন’র আয়োজনে রবিবার (২৮জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত মঞ্চে এই উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়। 

শারমিন মুস্তারী নাজু, সরোয়ার আলম দীপ ও তাহসিন ইশরাক তানহার সঞ্চালনায় এবং অঙ্গনের সভাপতি ও চবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চবি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া,  ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এ এম জিয়াউল ইসলাম।

নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. কুন্তল বড়ুয়া তার বক্তব্যে বলেন, প্রকৃতির যে ৬টি রূপ আছে তা আমরা সাধারণ মানুষরা ধরতে পারি না। তাই প্রকৃতি আমাদের কাছে অধরা থেকে যায়। প্রকৃতি তখনই নির্মম হয় যখন প্রকৃতিতে আঘাত করা হয়। প্রকৃতি নিষ্ঠুর তখনই হয় যখন প্রকৃতির উপর আমরা বর্বরতা চালাই। অথচ প্রকৃতি শুধু আমাদের দেয়। কখনো আমাদের থেকে নেয় না।

বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রকৃতির প্রতি যে নির্মম অবিচার শুরু হয়েছে সে অবিচার মানুষের উপর এসে পড়েছে। আমরা ক্রমান্বয়ে হিংস্র হয়ে উঠছি। বর্বর হয়ে উঠছি৷ আর তখনই রবীন্দ্রনাথ বাধা পায়। নজরুল সংকটে পড়ে। এই সংকট নিরসনে প্রকৃতির কাছে মাথা নত করত হবে। আমাদের এখন প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন। প্রকৃতি যখন তার রোষানলে পড়ে, যখন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না, তখন আমাদের নির্মম করে দেয়। তখন প্রকৃতির নির্মমতা মানুষকে হিংস্র করে তোলে।

তিনি বলেন,  আমরা যখন আমাদের সভ্যতার কথা বলি,আমাদের সংকটের কথা বলি, তখন আমাদের ভাবতে হবে, নজরুলের কাছে পৌঁছতে হবে, রবীন্দ্রনাথের কাছে পৌঁছতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের দর্শনগুলো যদি আমরা মেনে নিতে পারি তাহলে মানুষ এত বেশি কষ্ট, এত বেশি যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না।

সভাপতির বক্তব্যে  অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল কিছু গ্রেজুয়েট তৈরীর কারখানা নয়৷ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মানব সৃষ্টির অন্যতম একটি কেন্দ্র। মনুষ্যত্ববোধ, সৃজনশীলতা, সত্ত্বাবোধ,সাহিত্যবোধ, প্রকৃতির প্রতি প্রেম এইগুলো মানুষকে সত্যিকারের মানব সম্পদে পরিণত করে। আর তা শেখা যায় সংস্কৃতি চর্চা মাধ্যমে ।

তিনি বলেন,  আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু মানবিক উন্নয়নে মানুষ হিসেবে আমাদের যে চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন, সামাজিক বিকাশের প্রয়োজন তা থেকে আমরা ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, মানুষ হয়ে উঠার পূর্বশর্ত  মাত্র  একটি সার্টিফিকেট অর্জন নয়। মানুষ হয়ে উঠার পূর্বশর্ত সংস্কৃতির চর্চা, সুন্দরবোধের চর্চা, সুবোধের চর্চা। আর এই চর্চা আমরা রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে ধারণ করার মাধ্যমে পেয়ে থাকি।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন  চবি কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.সেকান্দর হোসেন চৌধুরী , সহকারী প্রক্টর মরিয়ম ইসলাম লিজা এবং অঙ্গনের সিনিয়র সদস্যরা ।

আলোচনা সভার পর অঙ্গন সদস্যদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের "কমলাকান্তের জবানবন্দি" নাটকের মঞ্চ পরিবেশনা এবং সর্বশেষ অঙ্গনের সিনিয়র সদস্যদের পরিবেশনার মাধ্যমে বিকাল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য, ‘অঙ্গন’ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন প্রতিবছর বিভিন্ন উৎসব ও ঋতু ভিত্তিক অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতির চর্চা করছে।প্রতিবছরের ন্যায় এইবারও রবীন্দ্র-নজরুল স্মরণ ও বর্ষা উদযাপন করেন সংগঠনটি।


সর্বশেষ সংবাদ