সপ্তাহের ছয়দিন প্রধানমন্ত্রীত্ব, ছুটির দিন ডাক্তারি

রোগীর সেবা করছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং (ডানে)
রোগীর সেবা করছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং (ডানে)  © সংগৃহীত

শনিবার ভুটানের সাধারণ একটি দিন এবং লোটে শেরিং মাত্রই জিগমে দরজি ওয়াংচুক ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালে একজন রোগীর মূত্রনালির অপারেশন শেষ করেছেন। তবে শেরিং কোনো সাধারণ ডাক্তার নন। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে তাকে হিমালয়ের পাদদেশের সুখী মানুষের ছোট্ট দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে হয়।

বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষিত লোটে শেরিং ২০১৩ সালে রাজনীতিতে পা রাখলেও ওই বছরের নির্বাচনে তার দল তেমন সুবিধা করতে পারেনি। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর দেশটির তৎকালীন রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক তাকে চিকিৎসকদের একটি দল গঠন করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে বিনে পয়সায় চিকিৎসা সেবা দিতে বলেন। সেই থেকে শুরু। মাত্র সাড়ে সাত লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে ২০০৮ সালে রাজার একচ্ছত্র ক্ষমতার অবসানের পর তৃতীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনে গতবছর তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং প্রতি শনিবার রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেন। বৃহস্পতিবার সকালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের পরামর্শ দেন এবং সোমবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান। “আমৃত্যু আমি এভাবেই সেবা দিয়ে যেতে চাই এবং প্রতিদিন কেনো পারি না তা নিয়ে আমার অনুশোচনা হয়,” যোগ করেন শেরিং।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এ বিষয়ে শেরিংয়ের মন্তব্য, “এটি আমার ওপর (রাষ্ট্রীয়) চাপ কমাতে সহায়তা করে। ৫০ বছর বয়সী এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিছু লোক গলফ খেলে, কেউ খেলে আর্চারি (তীর ছোড়া) এবং আমি অপারেশন করতে পছন্দ করি। এ কারণেই সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি আমি এখানে কাটাই।”

শেরিংয়ের ৪০ বছর বয়সী রোগী বুমথাপ (যাকে পাঁচ ঘণ্টার মূত্রনালি অপারেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে) হাসপাতালে থাকাবস্থাতেই এএফপির কাছে জানিয়েছেন যে, চিকিৎসার ফলাফলে তিনি সন্তুষ্ট। বুমথাপ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমার অপারেশন করেছেন এবং তাকে দেশের সেরা ডাক্তারদের একজন বলে মনে করা হয়। এজন্য আমি আরও বেশি স্বস্তিবোধ করছি।”

প্রতি সপ্তাহের একটি দিন হাতে গ্লাভস, গায়ে ডাক্তারদের পোশাক জড়িয়ে লোটে শেরিং যখন হাসপাতালের বারান্দা ধরে নিঃশব্দে হেঁটে যান, তখনও হাসপাতালের নার্স এবং অন্যান্য কর্মীদেরকে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে দেখা যায়।

রাজধানী থিম্পুর রাস্তায় কোনো ধরনের নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া লোটে শেরিং যখন নিজেই গাড়ি চালিয়ে যান, সবাইকে তখন তিনি আপন মানুষ বলেই মনে করেন, মন্তব্য শেরিংয়ের। তার কথায়, “যখন আমি গাড়ি চালিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে বের হই, আমার মনে হয় বামে একটু ঘুরলেই আমি হাসপাতালে চলে যেতে পারবো।”

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছাড়াও বৌদ্ধপ্রধান ভুটানকে ‘সুখি মানুষের দেশ’ বলার পেছনে এমন আরও অনেক দৃশ্যমান কারণ রয়েছে। দেশটির রাজধানী থিম্পুতে কোনো ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি নেই, তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালে টেলিভিশন সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়। তবুও ‘বজ্র ড্রাগনের’ দেশটিতে দুর্নীতি, গ্রামীণ দারিদ্র, যুব বেকারত্ব ও গ্যাং অপরাধের মতো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। [ সূত্র: ডেইলি স্টার]


সর্বশেষ সংবাদ