মাদকাসক্ত আয়রন ম্যানের বদলে যাবার গল্প

রবার্ট ডাউনি জুনিয়র
রবার্ট ডাউনি জুনিয়র  © সংগৃহীত

মার্ভেলের জনপ্রিয় চরিত্র ‘আয়রন ম্যান’। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র। হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা হলেও একসময় তিনি ছিলেন মাদকাসক্ত । সম্প্রতি অপরাহ্ উইনফ্রে শোতে তিনি জানান তার বদলে যাবার গল্প।

রবার্ট ডাউনি বলেন, ছোট বেলাতেই আমি মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে যাই। মাদক সেবন আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু এ জন্য আমি আমার পারিবারকে কখনোই দায়ী করি না। আট বছর বয়সে আমি ধূমপান শুরু করি, এরপর শুরু করি গাঁজা সেবন। অনেকটা দৈনন্দিন খাবারের মতোই আমাদের বাড়িতে গাজা সেবন করা হত। ১৯৯৫ সালে কোকেন এবং শেষে হেরোইনেও আসক্ত হয়ে যাই।

হেরোইন আর কোকেনের আসক্তি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এটা সবকিছু ভুলিয়ে দিত। একবার এর নেশায় বিভোর হলে এটা ত্যাগ করা কঠিন। এক সময় আমার নিজের ওপর থেকে আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি। নেশায় আসক্ত হবার পর আমি অনেক অঘটন ঘটিয়েছি। এমনি এক সময় প্রতিবেশীর বাড়িতে ঢুকে তাঁর বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতাম। আবার নগ্ন হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম রাস্তায়। আমার এই কাজগুলো প্রতিবার আমাকে জনসম্মুখে হেয় করেছে। বারবার আমাকে আদালতে যেতে হয়েছে । আদালত থেকে অনেকবার আমাকে সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আমি প্রতিবার পালিয়ে আসতাম।

তিনি আরও জানান, ১৯৯৮ সালে তিন বছরের সাজা শোনানো হয় আমাকে। সেবার আমাকে আদালতে হাতকড়া পরে দাঁড়াতে হয়েছিল। রায়ে আমাকে তিন বছর মাদক নিরাময় কেন্দ্র ও স্থানীয় জেলহাজতে কাটাতে হবে বলা হয়েছিল। সেটা আমার জন্য খুব কঠিন একটি দিন ছিল ।

রবার্ট ডাউনি জুনিয়র

 

তবে আমাকে পুরোপুরি বদলে দেয় জেলহাজতের দিনগুলো । সেখানে আমি কোনো নায়ক ছিলাম না। সেগুলো ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিন । প্রথম দিন খুব ভয় পেয়েছিলাম। পুরো ভিন্ন একটি জগৎ। একটা সময় অমার মনে হয়েছিল এটাই বুঝি শেষ, এরপর আর জীবন নেই। কিন্তু এখন মনে হয়, যেহেতু আমি সেই কঠিন সময় পার করে আসতে পেরেছি।তাই এখন আমি সব অসম্ভবকেই সম্ভব করতে পারব।

জেলখানায় আমাকে প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা করে রান্নাঘরে কাজ করতে হয়েছে। সেই সময়টায় আমি সিদ্ধান্ত নেই যে আর না। আর মাদক সেবন করবো না। আর সেই সিদ্ধান্ত আমার জীবনকে বদলে দেয়। এখন আমি সবাইকে বলি, অসহায়ত্বকে স্বীকার করা আর ব্যর্থতার কাছে আত্মসমর্পণ করে নেওয়া সহজ। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, দুর্যোগের মুহূর্তেও দৃঢ় থাকলে একটা সময় এর ফল পাওয়া যায়। তাই আমিও হার মানিনি কখনো। আমি আমার মনোবল দৃঢ় করে ৩০ বছরের মাদকাসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। আর এখন আমার মনে হয়, কঠিন বলে কিছু নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন। আর একবার যদি মন থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে সবকিছুই সম্ভব।


সর্বশেষ সংবাদ