প্রেমিকার হাত ধরে মানবিক সম্রাটের বিদায়, ভাঙল ২শ’ বছরের ইতিহাস

শারীরিক অসুস্থতার কারণে শত বছরের রীতিনীতি ভাঙতে হয়েছে ৮৫ বছরের বয়োবৃদ্ধ সম্রাটকে। যারা নাম সম্রাট আকিহিতো। মঙ্গলবার আকিহিতো-র আনুষ্ঠানিক পদত্যাগের পর বুধবার নতুন সম্রাট হিসেবে সিংহাসনে আসীন হচ্ছেন তার ছেলে ৫৫ বছরের যুবরাজ নারুহিতো। এর মধ্য দিয়ে দেশটির প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো জীবদ্দশায় দেশটির কোনও সম্রাট সিংহাসন ত্যাগ করলেন।

বিষয়টি নিয়ে জাপানে পিএইচডি পড়ুয়া নাদিম মাহমুদ ‘প্রেমিক সম্রাট, মানবিক সম্রাট’ শিরোনামে লিখেছেন, ‘তিন দশকের শাসন শেষে ঐতিহাসিকভাবে সিংহাসন ত্যাগ করলেন জাপানের সম্রাট আকিহিতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি এমন ব্যক্তি যে কিনা জাপানে মানবিক সম্রাট হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন।

রাজ পরিবার থেকে বেরিয়ে এসে সম্রাজ্ঞী মিচিকোকে বিয়ে করা যেমন তাকে সাধারণ করে তুলেছিল ঠিক তেমনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পিতা হিরোহিতোর কৃতকর্মের জন্য বিশ্ববাসীর কাছে ক্ষমা চাইতে দ্বিধা করেননি।

বিকেলে যখন টেলিভিশনে ভাষনে তিনি বললেন, তিনি জাপানের প্রতীকীয় রাষ্ট্রীয় প্রধান ছিলেন আর যারা তাকে মেনে নিয়ে এই ত্রিশ বছর সহযোগিতা করেছিলেন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই বিদায় বেলাও তিনি রাজকীয় পোষাক ছেড়ে আধুনিক যুগের পোষাক পড়তেও দ্বিধা ছিল না তার

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, এই সম্রাট ছিলেন একজন আপাদমস্তক প্রেমিক। ১৯৫৮ সালে এক টেনিসকোর্টে পরিচয়ের পর বিয়ে এরপর যখনই তাকে ক্যামেরার সামনে দেখা গেছে তখনই তিনি মিচিকোর হাত ধরে পথ হাটতেন। আজও বিদায় বেলাও তাকে হাতে হাত রেখে অগ্রসর হতে দেখলাম।

এদের প্রেমের ফসল তিন ছেলে-মেয়ে। বড় ছেলে নারুহিতো আগামীকাল নতুন সম্রাট হবেন। এই ছেলে মেয়ের নাম রেখেছেন সম্রাট আকিহিতোর বাবা ও মিচিকোর বাবা-মার নামের সাথে মিল রেখে। অদ্ভুত এই জুটির ভালোবাসা আরো দীর্ঘতর হোক। হেইসেই যুগকে বিদায় দিয়ে মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া রেইওয়া যুগের শুভ সূচনা হোক।’

প্রসঙ্গত, জাপানে সম্রাটের পদ অনেকটা অলঙ্কারিক। কেননা তার হাতে উল্লেখযোগ্য কোনও রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে না। তবে ঐতিহ্যগতভাবে তিনি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসার পাত্র। রাজা ও রাজপরিবারকে জাপানে জাতীয় প্রতীক হিসেবে সম্মানিত করা হয়। রাজকীয় পালাবদলের বিশাল কর্মযজ্ঞ নির্বিঘ্নে উদযাপনের জন্য ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ