মাহফুজউল্লাহ কি শহীদ মিনারে ঠাই পাবে: প্রশ্ন আসিফ নজরুলের

দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর বিদায় বেলায় নিজেদের স্মৃতির রোমন্থন করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। একইসঙ্গে প্রথিতযশা এই সাংবাদিকের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রেখে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানার সুযোগের কথাও জানালেন তিনি।

মাহফুজউল্লাহ শনিবার বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সকাল ১০টার দিকে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর অধ্যাপক আসিফ নজরুল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এ কথা জানান তিনি।

তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো— আমি যখন বিচিত্রায় যোগ দেই, কাউকে মনে হতো জ্ঞানী, কাউকে ব্যক্তিত্বময়, কাউকে স্মার্ট। পরে যখন মাহফুজ উল্লাহ্ ভাইকে দেখি, মনে হলো তিনি এসবের সবি। তাকে বুঝতে দিতাম না কিছু তবু। তর্ক করতাম, খোঁচাতাম। তিনিও একই আচরন করতেন আমার সাথে।

তিনি চরমভাবে অসুস্থ হওয়ার আগে শেষ অনুষ্ঠানে আমরা ছিলাম পাশাপাশি। চলে আসার সময় ব্র্যাক সেন্টারের লিফটে বললাম, রয়ালটির কিছু অংশ আমাকে দিবেন। যে লেকচার দিলাম বই বিক্রি তো ডাবল হয়ে গেল! তিনি বললেন, শুনো! বইটা (বেগম খালেদা জিয়ার জীবনী) লিখলাম দেখে তো সুযোগ পেলা লেকচার দেয়ার! এটা স্বীকার করো আগে! আমি বললাম ঠিক ঠিক! তিনি হাসলেন। দুষ্টু ছোট ভাইয়ের প্রতি স্নেহের হাসি।

তাকে বলিনি কোনদিন, অল্প দুয়েকজন মানুষকে যে ঈর্ষা করি আমি, তিনি তাদের একজন। অর্থ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি আছে আমার পরিচিত বহু মানুষের। কিন্তু এসব ফালতু লাগে যদি আত্মমর্যাদা না থাকে কারো। তার সেটা ছিল। আর ছিল নিজের তুখোড় মেধার প্রতি আত্মনিবেদন।

তিনি চলে গেছেন চিরতরে। বুদ্ধিজীবী করবস্থানে কি ঠাই হবে এখন তার? শহীদ মিনারে কি আনা হবে তাকে? জানি না। তবে এটা জানি, তিনি থাকবেন মানুষের হৃদয়ে, মননে, মেধায়। বহু প্রজন্ম ধরে। শান্তিতে থাকুন প্রিয় মাহফুজ ভাই।

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল সকালে ধানমন্ডির গ্রীন রোডে মাহফুজউল্লাহ তার নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।

পরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় মাহফুজউল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রখ্যাত এই সাংবাদিক হৃদরোগ, কিডনি ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ দেশের একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতি করা মাহফুজ উল্লাহ ষাটের দশকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন।

তিনি সাংবাদিকতা ছাড়াও খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ